সব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

গ্রিনল্যান্ডের জন্য একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে নতুন করে বিরোধের সূত্রপাত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর্কটিক অঞ্চলের বিশাল দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘লাগবে’ উল্লেখ করে সেটিকে নিজেদের অংশ হিসেবে যুক্ত করার প্রসঙ্গ আবারও সামনে এনেছেন তিনি।
বিবিসির করা এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং “আমাদের এটি পেতেই হবে।” তিনি জানান, ডেনমার্ক রাজ্যের আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডে বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালনের নেতৃত্ব দেবেন লুইজিয়ানার রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রি।
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কোপেনহেগেন। ডেনমার্ক সরকার জানিয়েছে, বিষয়টির ‘ব্যাখ্যা’ জানতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হবে। ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন এই নিয়োগকে ‘অত্যন্ত বিরক্তিকর’ বলে বর্ণনা করে ডেনিশ সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেন।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেনও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, গ্রিনল্যান্ড নিজের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করবে এবং এর আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। তিনি বলেন, “একজন বিশেষ দূত নিয়োগে আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে না। গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রি বলেন, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে যুক্ত করার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাওয়া তার জন্য সম্মানের।
জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর থেকেই গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান ও খনিজ সম্পদের কথা উল্লেখ করে দ্বীপটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার বিষয়ে নিজের পুরনো আগ্রহ নতুন করে প্রকাশ করে আসছেন ট্রাম্প। এমনকি এ লক্ষ্যে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তিনি, যা ন্যাটোর মিত্র ডেনমার্ককে হতবাক করেছে।
ট্রাম্প দাবি করেন, গ্রিনল্যান্ডের প্রয়োজন খনিজ সম্পদের জন্য নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য। তিনি বিশেষভাবে নিকটবর্তী সমুদ্রে চীনা ও রাশিয়ান জাহাজের উপস্থিতিকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রায় ৫৭ হাজার জনসংখ্যার গ্রিনল্যান্ড ১৯৭৯ সাল থেকে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে। তবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতির নিয়ন্ত্রণ এখনো ডেনমার্কের হাতেই রয়েছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের অধিকাংশ মানুষ ডেনমার্ক থেকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার পক্ষে হলেও যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও সরব হয়েছে। এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইইউ কমিশনের সভাপতি উরসুলা ভন ডের লেইন ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের জনগণের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, নিজের প্রথম প্রেসিডেন্ট মেয়াদে ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিল—গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।