বয়কট করবেন নাকি ???

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২০, ৬:১৭ অপরাহ্ণ

যারা ফ্রান্স বা ফ্রেঞ্চ প্রোডাক্টকে বয়কট করার ডাক দিচ্ছেন সবিনয়ের সাথে আপনাদের কে বলছি :

অতিসম্প্রতি ফ্রান্সে ঘটে কিছু ঘটনা কিছু কিছু মানুষের অতি মাত্রায় চেতনা, উগ্র মন মানসিকতা, পশ্চিমা বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কে ভুল বার্তা দিচ্ছে এবং সংখ্যালগু হিসেবে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত মুসলিমদের জীবন যাত্রা কঠিন আরো কঠিন করে দিচ্ছে।
আপনারা যারা বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশ থেকে ফ্রান্স বা ফ্রেঞ্চ প্রোডাক্টকে বয়কট করার ডাক দিচ্ছেন, সবিনয়ের সাথে আপনাদের
কে বলছি , ইউরোপের মধ্যে সব চেয়ে বেশি মুসলিম কোন দেশে বসবাস করে জানেন? তার উত্তরঃ ফ্রান্সে। প্রায় সাতান্ন লাখেরও অধিক মুসলমানের আবাস্থল এই ফ্রান্স। এই সাতান্ন লাখ, সাথে প্রায় এক লাখ ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশী মুসলিম এরা কি আপনাদের বয়কটের ভিতরে নাকি বাহিরে ?

আপনারা কি জানেন ? ফ্রান্সে প্রায় আড়াই হাজারের অধিক তালিকাভুক্ত মসজিদ রয়েছে যেখানে মুসলমানেরা তাদের ধর্ম চর্চা করে যাচ্ছে।একটা দেশের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলার পূর্বে সব কিছু বিবেচনা করা উচিত।

ধর্ম নিয়ে রাজনীতি এটি নতুন কিছু না, একটা দেশের কিছু মানুষ বা কিছু রাজনৈতিক পলিসি আপনাদের দৃষ্টিতে খারাপ হতে পারেন তাই বলে একটা দেশ কে খারাপ বলা ঠিক না।

কিছু দিন আগে নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেনে প্রকাশ্যে কোরান অবমাননার ঘটনা ঘটেছে, চীনের উইঘুরতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে, ভারতের কাশ্মীরে মুসলমানের উপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে, বার্মার আরাকানে মুসলিম রোহিঙ্গ্যারা নির্যাতীত হচ্ছে – আপনারা কয়টা দেশ কে “বয়কট” এর ডাক দিবেন বলেন ?

আপনাদের আন্দোলনের নিউজ ফরাসি মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে, উগ্রবাদীদের সমর্থনকারি হিসেবে দেখানো হচ্ছে, এই দেশের জনগণ প্রশাসন ভালো করে দেখছে। বয়কট (ফেরান্স) বলে স্লোগান দিয়ে আপনারা তো ঘরে ফিরে গিয়েছেন কিন্তু এর পর সিস্টেমেটিক লাথি উষ্ঠা কারা খাবে ?

ফরাসিরা যদি বাংলাদেশ বয়কট করার ডাক দেয় তখন কি হবে কখনো একটু ভেবে দেখেছেন ? ইতিমধ্যে ফ্রান্সের একজন এম পি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশী গার্মেন্টস পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছেন ফ্রান্সে হচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে অন্যতম প্রভাবশালী এবং নেতৃত্বস্থানীয় দেশ. ফ্রান্স বয়কটের ডাক দিলে অন্য দেশ গুলি সাথে সাথে আওয়াজ তুলবে, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের সর্ব বৃহৎ বাজার টি নষ্ট হয়ে যেতে পারে । সেই সুযোগ টি নিয়ে নেয়ার জন্য ভারত, চায়না, ভিয়েতনাম বসে রয়েছে। বাংলাদেশ বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।একজন বাংলাদেশী আমি কখনো চাইবো না আমার দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোক।

*এর পরে যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে তারা হচ্ছেন ফ্রান্স প্রবাসীরা বাংলাদেশীরা।
কিভাবে হবে কিছু আইডিয়া দিচ্ছি :
*বাংলাদেশ থেকে সাগর -জঙ্গল পাড়ি দিয়ে আশ্রয়ের আশায় আসা বাংলাদেশী অভিবাসীর জন্য অভিশাপ হতে পারে।
*কাগজের আশায় মাটি কামড়ে পড়ে থাকা মানুষটার আবেদন নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে।
*স্ত্রী সন্তানকে ফ্রান্সে আনার জন্য যে ফ্রান্স প্রবাসী ভাই দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে তার আবেদনে প্রভাব পড়তে পারে

* ফ্রান্সের সংকট কালীন সময়ে বাংলাদেশিরা ফ্রান্সের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে , বয়কট বয়কট বলে চিৎকার করেছে এই নিউজ গুলি দেখে কিছু কিছু কট্টরপিন্থী টাইপের ফরাসিরা বাংলাদেশিদের উপর ক্ষিপ্ত হতে পারে , বর্ণবাদী আচরণ বাড়তে পারে বিশেষ করে চাকুরী এবং অভিবাসনের ক্ষেত্রে ও প্রভাব পড়তে পারে।

উপরোক্ত বিষয় গুলি কি আপনারা একটু ভেবে দেখেন প্লিজ।
এবার ব্যঙ্গ চিত্র প্রসঙ্গে কিছু বলি:
আমাদের প্রাণের নবীকে কেউ অপমান করলে সেটি প্রতিটি মুসলমানের কলিজায় আঘাত করে, আমাদের কষ্ট লাগে এতে কোনো দ্বিমত থাকতে পারে না। কোনো মুসলমান নবীর অপমানকে মেনে নিতে পারবে না।নিজ বিবেকের নিকট প্রশ্ন করলাম , আচ্ছা আমাদের মহানবীর কোনো ছবি বা (অংকিত ) কোনো চিত্রকর্ম এই দুনিয়াতে কি আছে ? উত্তর : না, যেখানে চিত্রই নেই সেখানে তা ব্যঙ্গ করে কিভাবে? দাড়ি , টুপি ,লম্বা একটা আলখাল্লা লাগিয়ে কেউ যদি বলে এটি তোমাদের মোহাম্মদ এর ছবি আমরা কি বিশ্বাস করবো? (নাউযুবিল্লাহ ) না কখনও না। আমার বিশ্বাস,কোনো ঈমানদার মুসলিম এটি বিশ্বাস করতে পারে না।

আমরা জানি ,আমাদের নবী হচ্ছেন সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ মহা মানব। তিনি ছিলেন আল্লাহর হাবীব। উনার প্রকৃত আকৃতি বা ছবি আঁকার মতো কোনো চিত্রককর , কোনো শিল্পী এদুনিয়াতে সৃষ্টি হয় নাই. যদি সারা বিশ্বের সকল সেরা চিত্রকররা এক হয়ে কেয়ামত পর্যন্ত চেষ্টা করলেও পারবে না- এটি আমার বিশ্বাস। অন্যদিকে ,স্বয়ং আল্লাহ যাকে সম্মানীত করেছেন তাকে অসম্মান করার সাধ্য কারো নেই , সাধ্য কারো নেই , সাধ্য কারো নেই।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় , আল্লাহ , আল্লাহর রাসূল , ইসলাম এবং কোরান কে হেফাজত করার জন্য মহান আল্লাহ স্বয়ং আরশে আজিমে বসে আছেন। সুতরাং ধর্মের নামে মানুষ হত্যা ,গলা কাঁটা, মানুষকে পিটিয়ে পুড়িয়ে মারা এসব বন্ধ হোক. সকল ধরণের ধর্মীয় উগ্রতা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম কে ঘৃণা ভরে বয়কট করুন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...