জোটের ১৮ দলই জামায়াত ছাড়ার পক্ষে

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:২৫ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে বাদ দেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ১৮টি দলই। ইতোমধ্যে মূল দলকে এ ব্যাপারে পরামর্শও দেয়া হচ্ছে। তারা বলছে, যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত হওয়ায় তরুণ ও যুবকদের সমর্থন হারাচ্ছে জামায়াত। এ কারণে যুদ্ধাপরাধী এ সংগঠনের সঙ্গে থাকলে আগামীতে চরম হুমকিতে পড়বে জোটের রাজনীতি।

এর আগে গেল ১৯ জুলাই বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল বৈঠকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়া নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও দুই-একটি বাদে জোটের অন্য দলের নেতারা জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে জোরালো মতামত দেন।

জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে ওই বৈঠকে বক্তব্যে তুলে ধরেছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বিএনপির লাভ-ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেন বৈঠকে। তবে শেষ অবধি জামায়াত ছাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও আলোচনা অব্যাহত থাকার কথা জানানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ থাকলে আগামীতে ২০ দলীয় জোটের রাজনীতি হুমকিতে পড়বে। কেননা, তরুণ ও যুবকরা জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে অভিযুক্ত করছে। তাই এই দল যাদের সঙ্গে থাকবে তাদের তরুণ ও যুবকরা কখনোই সমর্থন করবে না। এসব চিন্তা করেই জোটের ১৮টি দল জামায়াত ছাড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, এখনও এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এ ব্যাপারে ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মণি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের দুই-একটি দল ছাড়া অন্য দলগুলো জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়া পক্ষে রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে জোটের অন্যতম শরীক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে কোনো কিছু শুনি নাই। নিজেরটা নিজে বললে তো হবে না। তিনি আরো বলেন, ২০ দলীয় জোটে কিছু ফুল দল, কিছু হাফ দল এবং কিছু কোয়ার্টার দল আছে। কথাটি শুনতে খারাপ শোনালেও কিছু করার নেই। কারণ জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। জোটের কর্মপরিকল্পনার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে দিক-নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে গেল ৫ জুলাই বৈঠক আর পরদিন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন ছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে আর কোনো কর্মসূচিতে দেখা যায়নি ২০ দলীয় জোটকে। কোনো সভা-সমাবেশেও তাদের চোখে পড়েনি। এমনকি মানুষের পাশে দাঁড়াতেও দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে বলেই মনে করছেন জোট নেতাকর্মীরা। যদিও শীর্ষ নেতারা দাবি করছেন, কর্মসূচি না থাকলেও শরীকদলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে মানুষকে সহযোগিতা করে গেছে।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, জোটের কোনো কর্মসূচি নেই এটা যেমন ঠিক, তেমনি জোট সক্রিয় রয়েছে সেটাও ঠিক। বিএনপি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। করোনার পর বিএনপি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

সূত্রমতে, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও দণ্ড কার্যকর হওয়া ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে জামায়াতের নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারায় বিএনপির কাঁধে ভর করা ছাড়া উপায় নেই দলটির। তাই বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৌশল পাল্টে সরকারের চাপ এবং বিদেশিদের চোখে ধুলো দিতে রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাখঢাক করে চলেছে বিএনপি ও জামায়াত।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...