ইভিএমে ভোট চায় না বাংলাদেশ মুসলীম লীগ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২২, ১২:২৩ অপরাহ্ণ


আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চায় না বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। এছাড়া ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছে দলটি।

সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে দলটি এমন প্রস্তাবনা দেয়।

সংলাপে বাংলাদেশ মুসলীম লীগের সভাপতির নেতৃত্বে ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা ও মহাসচিব কাজী আবুল খায়েরের স্বাক্ষরিত প্রস্তাবনায় আইনি কাঠামো, নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও বিবিধ বিষয়ে ১৯টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

সুপারিশ গুলো হল-

১. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে কর্ম জীবনে প্রবেশের পূর্বে ও ছাত্র জীবনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বিবেচনায় আনতে হবে।

২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলির মতো বিষয়াবলী প্রত্যক্ষভাবে সরকারের ভূমিকা থাকে বলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নির্বাচনকালীন সময়েও সরকার প্রধানের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই বাস্তবতা আমলে নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব, জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে, জেলা জজের সমমর্যাদা সম্পন্ন যেকোনো বিশেষ জজকে প্রদান করা হলে, নির্বাচন প্রভাবমুক্ত হবে এবং জনগণের আস্থা ও স্বস্তি বৃদ্ধি পাবে বলে আমরা মনে করছি।

৩. তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত জনপ্রশাসন, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার সুপারিশ করছি।

৪. নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করার স্বার্থে, নির্বাচনের তিন মাস পূর্বে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য নির্বাচনন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।

৫. বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না, একথা জনগণের বড় একটি অংশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বিগত এগারটি সংসদ নির্বাচনে, সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্বকারী সক্রিয় এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব -নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়ার সুপারিশ করছি।

৬. ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে, নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনীনএলাকায় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

৭. কাস্টিং ভোট একান্ন শতাংশের (৫১ শতাংশ) কম হলে গণতন্ত্রের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট আসনে পুনঃনির্বাচনের প্রস্তাব করছি।

৮. নির্বাচনে প্রার্থীদের বেশুমার অর্থ ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। প্রার্থীর আয়-ব্যয়ের হিসাব তদন্ত করার কার্যকরী পদ্ধতি ও দল কর্তৃক প্রার্থীর মনোনয়ন প্রক্রিয়া কঠোর নজরদারীর আওতায় আনার প্রস্তাব করছি।

৯. আমরা মনে করি, প্রার্থী পরিচিতির জন্য প্রচারের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রার্থীর নাম, প্রতীক, দল, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ইত্যাদি সম্বলিত যৌথ পোস্টার, ব্যানারের মতো প্রচার সামগ্রী নির্দিষ্ট পরিমাণে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ছাপানো ও সমহারে প্রার্থীদের নিকট বন্টন করার নিয়ম চালু করার প্রস্তাব করছি।

প্রার্থীরা নিজ দায়িত্বে, নির্বাচনী বিধি মোতাবেক তা লাগানো বা বিলির ব্যবস্থা করবেন। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহকৃত সামগ্রীর বাইরে প্রার্থীর নিজস্ব কোনো প্রচার সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না।

১০. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় রিটার্নিং অফিসার নির্বাচন উপজেলা কর্মকর্তার ব্যবস্থাপনায় কমপক্ষে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন

নির্বাচনী জনসভা আয়োজনের প্রস্তাব করছি, যেখানে আচরণ বিধি মেনে প্রত্যেক প্রার্থীর বক্তব্য রাখার সমান সুযোগ থাকবে।

১১. বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য এবসেন্টি ব্যালট, মেইলিং পোলিং, অ্যাডভান্স পোলিং, অনলাইন পোলিং সিস্টেম ইত্যাদি আধুনিক নির্বাচনী পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব রাখছি।

১২. ইভিএম ব্যবহার করে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জাতি প্রস্তুত নয়।

১৩. প্রবাসীদের নাম দ্রুততম সময়ে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নিতে ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করছি।
১৪. ভোট দেওয়ার সুবিধার্থে ভোটারের ক্রমিক নম্বর, ভোট কেন্দ্রের নাম, বুথ নম্বর ইত্যাদি তথ্য ভোটারদের সহজে জেনে নেওয়ার জন্য এন্ড্রয়েড ও ওয়েব বেসড অ্যাপ্লিকেশন তৈরির বিষয়টি কমিশন ভেবে দেখবে আশা করি।

১৫. ভোটার তালিকা পি.ডি.এফ (সফট কপি) ও ছাপানো (হার্ড কপি) উভয় প্রকরণে বিনামূল্যে প্রার্থীদের সরবরাহ করার প্রস্তাব করছি।

১৬. প্রতিটি ভোট কেন্দ্র, ভোট গণনা কক্ষ ও ফলাফল ঘোষণা কক্ষ সি.সি আই.পি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসার সুপারিশ করছি। ১৭. বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সর্বনাশা সংস্কৃতি রুখে দিতে ‘না’ ভোট প্রচলনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

১৮. একাধিক প্রতীকে ভোট প্রদান করা হলে ভোটটি বাতিল ঘোষণা না করে বরং ‘না’ ভোট হিসাবে গণ্য করার প্রস্তাব করছি।

১৯. জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের নিবন্ধিত প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...