একজন শিল্পীর কি ‘না’ বলারও অধিকার নেই, প্রশ্ন সুনেরাহর

ইমরুল নূর,

  • প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২২, ৭:০৮ অপরাহ্ণ

সরকারি অনুদানে নির্মিত হতে যাচ্ছে সিনেমা ‘জয় বাংলার ধ্বনি’। খ ম খুরশিদ পরিচালিত এই ছবিতে চিত্রনায়ক নিরবের বিপরীতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামালের অভিনয়ের কথা থাকলেও তিনি ছবিটি থেকে সরে দাঁড়ান। ছবিটি নিয়ে কয়েকদফায় পরিচালকের সঙ্গে অভিনেত্রীর কথা হলেও বেশ কিছু কারণে মনোঃপুত না হওয়ায় ছবিটি করতে অপারগতা প্রকাশ করেন সুনেরাহ।

অভিনেত্রীর ভাষ্য, প্রথমত সরকারি অনুদানের ছবি, তারপর মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট নিয়ে গল্প; স্বভাবতই কাজটি করতে আগ্রহ প্রকাশ করি। কিন্তু স্ক্রিপ্ট হাতে পাওয়ার পর সেটি পড়ে পরিচালককে বেশ কিছু কারেকশন দেই আমি। ছবির গল্প সুন্দর কিন্তু চিত্রনাট্য যেভাবে সাজানো হয়েছে, আমার কাছে মনে হয়েছে কিছু জায়গায় কারেকশন করলে সেটা ভাল কিছু হতে পারে। একটা গল্প যেমনই হোক, চিত্রনাট্য সুন্দর হলে কাজটাও ভালো দাঁড়ায়। আমি এটা বিশ্বাস করি। তিনি বলেছেন, সেটা তিনি কারেকশন করবেন এবং আমাকে পরে কারেকশনও পাঠান। কিন্তু তারপরও কোনভাবেই আমার মনোঃপুত হচ্ছিলো না। কারণ চরিত্রের যে বয়স এবং তার যে প্রস্থেটিক মেকআপ এবং আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো সঠিক নাহলে সেটা ফুটে উঠবে না। সবচেয়ে বড় কথা, স্ক্রিপ্ট করার পর আমি নিজেকে কোনভাবেই কনভিন্স করতে পারছিলাম না, কাজটি করার জন্য। এখন আমি নিজে যদি গল্প বা চরিত্র নিয়ে সন্তষ্ট না হয় তাহলে সে কাজটি তো কোনভাবেই ভালো হবে না। যার কারণে সংবাদ সম্মেলন করার আগেই আমি পরিচালককে অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমি ছবিটি করতে পারছি না।

সুনেরাহ বিনতে কামাল বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি একজন শিল্পীর ‘না’ বলার অধিকার অবশ্যই আছে। শুধু শিল্পী কেন, যেকোন বিষয়েই প্রত্যেকের ‘না’ বলার অধিকার আছে। ছবিটি না করার কারণে পরিচালক আমার সঙ্গে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করেন, উচ্চস্বরে কথা বলেন; যেটা আজ পর্যন্ত কেউই করেনি আমার সাথে। উনার এমন আচরণে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। তিনি আমাকে ফোন করে জানান, আমি যদি ছবিটি না করি তাহলে নাকি আমার বিপদ হবে। আমি যথেষ্ট বিনয়ের সহিত তার সঙ্গে কথা বলেছি, আমার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছি কিন্তু প্রতিউত্তরে তিনি তো আমাকে হুমকি দিতে পারেন না! একজন শিল্পীর কি ‘না’ বলারও অধিকার নেই?’

যোগ করে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘একে তো অনুদানের ছবি, আবার মুক্তিযুদ্ধের গল্পে; যে কেউই ছবিটি করতে চাইবে। আমিও চেয়েছি। আমি যখন স্ক্রিপ্ট পড়ি তখন আমার বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, কি পড়িস? আমি বলেছিলাম, অনুদনের একটা ছবি, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। তখন আমার বাবাও চাইলেন আমি যেন ছবিটি করি। এখন আমার কথা হলো, স্ক্রিপ্ট পড়ার পর আমি নিজে যদি কনফিডেন্স না পাই বা আমার মন যদি না টানে তাহলে জোর করে তো আমি কাজ করবো না। তাই আমি শুটিং শুরু হওয়ার অনেক আগেই না করে দিয়েছি, যেন তারা এরমধ্যে অন্য কোন নায়িকা খুঁজে নিতে পারেন। আমি তো চাইলে শুটিং সেটে গিয়েও ফাঁসাতে পারতাম! কিন্তু একজন শিল্পী হিসেবে আমি কখনোই কাউকে ক্ষতির মুখে পড়তে দিতে পারি না। অন্তত এই শিক্ষাটা আমার পরিবার আমাকে দেয়নি।

আমি পরিচালকের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলাম সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য। এরমধ্যে তিনি একদিন দেখা করে বললেন, ঠিক আছে সমস্যা নেই। একটা হাতে লেখা স্ট্যাম্প পেপার নিয়ে এসে আমাকে বলেন সই করে দিতে। এটা চুক্তিপত্র ছিলো না। তিনি বলেছিলেন, যেহেতু সরকারি প্রজেক্ট তাই কাজটা সামনে এগিয়ে রাখার জন্য একটা সই করে দাও। হাতে লেখা স্ট্যাম্প পেপার দেখে আমি সই করতে রাজি ছিলাম না। উনি আশ্বস্ত করলেন যে, এটা জাস্ট একটা প্রসিডিউর। তারপর আমারও একটু তাড়া ছিল যার কারণে আমি সই করে দেই। উনি আমাকে ন্যূনতম একটা রেমুনারেশন আমাকে অ্যাডভান্স করেন। এর পরেই দেখলাম গণমাধ্যমে ছবিটির ঘোষণা এলো যে, আমি এই ছবিতে অভিনয় করছি। অথচ কোথাও আমার মন্তব্য ছিলো না এমনকি তখনও আমি পরিচালককে নিশ্চিত করিনি যে, ছবিটি আমি করছি। এরপর সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন তিনি। এর আগেই আমি উনাকে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।’

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে সুনেরাহ বলেন, ‘আমি না বলার পরেও তিনি আমাকে কয়েকবার ফোন দিয়েছেন, দেখা করতে বলেছেন। আমি উনাকে বলেছি, আমার দেখা করতে কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমি কাজটি করতে পারবো না। আমার মন কোনভাবেই টানছে না কাজটি করার জন্য। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করে গেছেন, আমাকে হুমকি দিলেন। যেটার জন্য আমি কোনভাবেই প্রস্তত ছিলাম না। এখন তো আমার নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত আমি। তারপরও আমি উনার সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে কথা বলেছি এবং আজ শনিবার উনাকে ইমেইলে এবং উনার ঠিকানার বরাবর ফরমাল ডিক্লেয়ারেশন লেটার পাঠিয়ে দিয়েছি এবং উনার দেওয়া অ্যাডভান্সের টাকা ফেরত নিতে বলি।’

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...