লাগাতার কর্মসূচিতে মাঠ দখলে রাখবে আ.লীগ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ৮:০৮ অপরাহ্ণ

জাতীয় নির্বাচনের আগে রাজনীতির ময়দান দখলে রাখতে মরিয়া সরকারে থাকা দল আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর নিয়ে বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যকে ঘিরে তৎপরতা বেড়েছে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে। এজন্য রাজধানীতে দলীয় গুচ্ছ কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবেন নেতাকর্মীরা।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব থাকবে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ওপর। আর এই তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের নেতারা। শনিবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও বড় সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দলটির কার্যক্রম।

সম্প্রতি বিএনপি নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে সরকারকে হটিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কথায় দেশ চলবে। বিরোধী দলের নেতাদের এ ধরনের বক্তব্যকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ডিসেম্বরে বিএনপিকে রাজপথেই নামতে দেওয়া হবে না। বিজয়ের মাসজুড়ে লাগাতার কর্মসূচি রাখা হবে। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, এর সহযোগী সংগঠন-ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ ও অন্যান্য সংগঠনও নগরীর রাজপথে থাকবে। এজন্য ঢাকা মহানগর শাখার নেতারা ব্যাপক তৎপর রয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা। শনিবার ঢাকা জেলা শাখার সম্মেলন। এই সম্মেলনে বড় ধরনের সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতারা। নভেম্বর জুড়ে দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস, ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি থাকবে। এই দিবস উপলক্ষে লাগাতার কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে মাঠে থাকবেন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া দলীয় সম্মেলনের কার্যক্রমও থাকবে।

জাতীয় কর্মসূচির পাশাপাশি সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী যুবলীগ। সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী যুবলীগ আগামী ১১ নভেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে। মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে নগরীতে যুবলীগ নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তাদের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনের নেতারা। এজন্য শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (আইইবি) বর্ধিত সভার আয়োজন করেছে সংগঠনটি। সারা দেশের নেতাদের সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে।

সম্প্রতি বর্ধিত সভায় যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, সড়কের মালিক কে তা বিএনপিকে দেখানো হবে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসতে চায়। আমরা প্রমাণ করব যে, ১১ নভেম্বর এই যুব মহাসমাবেশের মাধ্যমে যুবলীগ একাই আগামীতে সংগঠন হিসেবে তাদের নৈরাজ্য মোকাবিলা করতে পারে।

এ ছাড়া বিএনপির হুশিয়ারি পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালনের জন্য নগরীর বিভিন্ন স্থানে নগর আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু এ বিষয়ে বলেন, আমাদের ইউনিট, ওয়ার্ড এবং থানাপর্যায়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ঢাকা এবং এর আশপাশের জেলা ও উপজেলায়ও এরই মধ্যে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে ছাত্রলীগও একই সঙ্গে ময়দানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছেন, আমাদের দলীয় অভিভাবকরা নির্দেশ দিলেই আমরা বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে প্রস্তুত।

এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপিও রাজধানীতে বড় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপিকে রাজপথে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, আমাদের প্রস্তুতি অনুযায়ী শোডাউন করব এবং তারা (বিএনপি) তাদেরটা করবে। আমরা কখনো তাদের বিরক্ত করব না। তারা যদি কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করে তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা দেখবে। আমরা কখনোই তাদের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষে জড়াতে চাই না। তিনি বলেন, তারা সব সময় ঘোলা পানিতে মাছ ধরার চেষ্টা করে। তবে, আমরা তাদের এমন সুযোগ দেব না।

দলের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। বুধবার এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দু-তিনটা সমাবেশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাবটা এমন, তারা ক্ষমতায় এসেই গেছে। এত সোজা নয়। খেলা হবে। রাজপথে খেলা হবে।

বিজয়ের মাসকে কলঙ্কিত করার জন্য বিএনপি ডিসেম্বরকে বেছে নিয়েছে বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, বিএনপির মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা নেই। তাই দলটি বিজয়ের মাসকে কলঙ্কিত করতে চায়। তারা এখন সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিভিন্ন সময়ে হাঁক-ডাক দেয়। আওয়ামী লীগকে দিনক্ষণ দিয়ে কোনো লাভ নেই। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিলাম। জনগণ আর তাদের ক্ষমতায় বসতে দেয়নি, দেবেও না।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...