বিত্তশালীদের কবজায় গৃহহীনদের বাড়ি

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২২, ৬:২২ অপরাহ্ণ

দেশজুড়ে গৃহহীন ও হতদরিদ্র মানুষের মাথা গোঁজার আশ্রয় করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই নামে-বেনামে সেই বাড়ির দখল চলে গেছে স্থানীয় বিত্তশালীদের হাতে। সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে সাভারের আমিনবাজারে। কালবেলার অনুসন্ধান বলছে, গৃহহীনদের জন্য ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমিনবাজার ইউনিয়নে মোট ছয়টি বাড়ির বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে জায়গা জটিলতায় দুটি বাড়ির বরাদ্দ ফেরত যায়। বাকি চারটি বাড়ির দুটি পেয়েছে সরকারি তালিকাভুক্ত দুজন, যার একটিসহ বাকি দুটি টাকার বিনিময়ে চলে গেছে স্থানীয় বিত্তশালীদের হাতে।

গত সোমবার সাভারের আমিনবাজার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বিনোদবাড়ি, নরসিংহপুর ও পাঁচগাছিয়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ বরাদ্দ থাকলেও প্রায় কোটি টাকার মালিক ও তার দুই বোন পেয়েছেন সেই বাড়ি। এমনকি বরাদ্দের চার বাড়ির একটি ইতোমধ্যে ভাড়া হয়েছে রিকশার গ্যারেজ ও দোকান হিসেবে। মাত্র একটিতে রয়েছেন বরাদ্দ পাওয়া শাহ আলম, আর বাকি দুটি বাড়ি নির্মাণের পর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বরাদ্দের তালিকা বলছে, সরকারনির্মিত চার বাড়ির প্রকৃত মালিক আমিনবাজারের নরসিংহপুর এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে আসমা আক্তার, একই এলাকার আব্দুল হাকিমের মেয়ে আয়েশা আক্তার, আমিনবাজারের বিনোদবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে রুহুল আমিন ও আমিনবাজারের ধোবাউড়া এলাকার আব্দুল ওহাবের ছেলে প্রতিবন্ধী শাহ আলম। শাহ আলম ও আয়েশা আক্তার ছাড়া বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।

এই চার বাড়ির মধ্যে তিনটির দখল এখন আমিনবাজারের নরসিংহপুর এলাকার বিত্তশালী ব্যবসায়ী ফয়েজ, তার আপন বোন আসমা ও খালাতো বোন শাহিদা আক্তার রুনার হাতে। স্থানীয় ফয়জুর রহমান ফয়েজের ভেকু, সিমেন্ট, কয়লা ড্রেজার, বালুর ব্যবসাসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তার খালাতো বোন শাহিদা আক্তার রুনা থাকেন শ্বশুরবাড়ির তিনতলা ভবনে। স্বামী মোরসালিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল বিভাগের স্টোর ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আয়েশা আক্তার বিত্তশালী হওয়ায় সরকারি বাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে থাকছেন নানাবাড়ির তিনতলা ভবনে। এই সুযোগে সেই বাড়িটি পেয়েছেন শাহিদা আক্তার রুনা।

ফয়েজ ও শাহিদা আক্তারের ভাই সাদ্দাম বলেন, এই ঘরগুলো গরিব মানুষের জন্য। আমার খালাতো ভাই ফয়েজ আমার মাকে ভুলভাল বুঝিয়ে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে আমার বোনকে এই ঘরটি এনে দেয়। আমাদের তিনতলা বাড়ি আছে। এই ঘরগুলো গরিব মানুষের হক। আর শাহিদা আক্তার রুনার স্বামী মোরসালিন বলেন, আমার খালাতো শ্যালক ফয়েজুর রহমান আমার স্ত্রীকে বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়। আমরা ওই বরাদ্দের সঙ্গে আরও ২ লাখ টাকা দিয়ে বাড়ির কাজ করাই। বাড়িটি ভাড়া দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।

এ ব্যাপারে ফয়েজ বলেন, আমি আমার দুই বোনকে দুটি ঘর এনে দিয়েছি। তাদের অবস্থা খারাপ ছিল। তাই উপজেলায় যোগাযোগ করে দুটি ঘরের ব্যবস্থা করেছিলাম।

গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণের এই প্রকল্পের সভাপতি ছিলেন আমিনবাজার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের তৎকালীন ও বর্তমান মেম্বার রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি প্রকল্প সভাপতি ছিলাম। কিন্তু কাকে ঘর দিয়েছে—এসব আমি জানি না। সবকিছু ইউনিয়নের সচিব বলতে পারবেন। সচিবই সবকিছু করেছেন। উনিই নাম লিখেছেন। কে দিয়েছে তা তো উনিই জানেন।

আমিনবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আফজাল হোসেন বলেন, কাজ হওয়ার পর যদি এ কথা বলা হয়, তাহলে নার্ভাস হয়ে বলছেন। কারণ, এটা তো সচিবের ফাংশন না। ফয়েজসহ তারাই এ কাজ করেছেন। ফয়েজ হলো আগের চেয়ারম্যানের আত্মীয়। এখানে আমার আর মেম্বারের তেমন কোনো ফাংশন নাই। ওনারাই তদারকি করেছেন, ওনারাই সব করেছেন।

তৎকালীন সাভার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একরামুল ইসলাম বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তৎকালীন আমিনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন সাভারের আলোচিত ৭ শিক্ষার্থী খুনের মামলার অন্যতম আসামি এবং ফাঁসির আদেশ নিয়ে কারাগারে থাকায় তার কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, এখানে যারা গৃহহীন রয়েছে, তাদের জন্য গৃহ নির্মাণের প্রকল্প ছিল। তৎকালীন নথিপত্র দেখে তদন্ত করে যদি কোনো ব্যত্যয় দেখা যায়, তাহলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খবর : কালবেলা

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...