সিলেট নগরীর পাড়া-মহল্লায় ঘন ঘন স্পীডব্রেকার বিপজ্জনক ও বিরক্তিকর

মারুফ হাসান,

  • প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২২, ৩:২০ অপরাহ্ণ


যান দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ ‘বেশি গতি’ এই গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার হয় স্পীডব্রেকার বা গতিরোধক। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অধিক ব্যস্ততম এলাকা, স্কুল-কলেজ-মসজিদ ও জনসাধারণ পারাপারের স্থানে সাধারণত গতিরোধক দেয়া হয়। এতে করে চালকরা গাড়ীর গতি কমাতে বাধ্য হন। তবে নিয়ম বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র স্থাপিত গতিরোধকগুলো যানবাহন চলাচলে যেমন ‘বিপজ্জনক’ তেমনি যাত্রীদের জন্য ‘বিরক্তিকর’।

সরেজমিন নগরীর বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকা ঘুরে স্পীডব্রেকার-এর যথেচ্ছা ব্যবহার লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, কুমারপাড়া, শিবগঞ্জ, উপশহর, শেখঘাট, পাঠানটুলা, জালালাবাদ ও আখালিয়ার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক সড়ক ঘুরে দেখা গেছে গতিরোধক-এর ভয়াবহ রূপ। কোথাও মোটা, কোথাও চওড়া আবার কোথাও সরু স্পীডব্রেকার। কোনো এলাকায় মাত্র ৩শ মিটারের মধ্যে ৪টি, কোথাও আধা কিলোমিটারের মধ্যে ৯টি, আবার কোনো এলাকায় ১ কিলোমিটারের মধ্যে ১৪টি গতিরোধকের সন্ধান পাওয়া গেছে। গতিরোধকগুলোর কারণে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন তেমনি বিরক্ত হচ্ছে যাত্রীসাধারণ। আর রোগীদের অবস্থাতো শোচনীয়। বেশীরভাগ গতিরোধক উঁচু ও অপ্রশস্ত। এর অধিকাংশের গায়ের আবার রং নেই। নেই চালকদের জন্য সতর্কতামূলক নির্দেশনাও।

লিচু বাগান লিংকরোড থেকে হাউজিং এস্টেটের গেইট ১.২শ মিটার সড়কে ১৫টি স্পীডব্রেকার রয়েছে, আখালিয়া পয়েন্ট থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত ১ কিলো মিটার থেকে একটু বেশি সড়কে ১৪টি, নেহারিকা লেকসিটি আবাসিকের ৭শ মিটার সড়কে ১১টি, ইলাশকান্দি-চৌকিদেখি সড়কের আধা কিলোমিটারে ১০টি, ঝর্ণারপার থেকে রায়নগর রাজবাড়ী পয়েন্ট পর্যন্ত আধা কিলো সড়কে ৯টি, সাপ্লাই থেকে বড়বাজার সড়কের আধা কিলোমিটারে ১০টি, দক্ষিণ সুরমার বারখলা-কায়েস্তরাইল সড়কের আধা কিলোমিটারে ৮টি, জালালাবাদ-পশ্চিম পীর মহল্লা সড়কের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে ৭টি, বনকলাপাড়া-সুবিদবাজার ১.৩ কিলোমিটার সড়কে ৭টি, লামাবাজার পয়েন্ট থেকে ভাতালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত আধা কিলোমিটারের চাইতেও কম সড়কে ৭টি, অগ্রণী আবাসিক এলাকা (লন্ডনী রোড)-এর আধা কিলোমিটারে ৭টি, পাঠানটুলা পয়েন্ট থেকে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিছনের গেট পর্যন্ত আধা কিলোমিটারে দুই জোড়াসহ ৭টি, মদীনামার্কেট-কালীবাড়ি সড়কের ৯শ মিটারে ৬টি, সুরমা আবাসিক এলাকার ৩শ মিটার সড়কে ৪টি, তপোবন আবাসিক এলাকার ৩শ মিটারে ৪টি এবং শ্রাবণী আবাসিক এলাকার ৩৫০ মিটার সড়কে ৪টি স্পীডব্রেকার রয়েছে।

এছাড়াও শাহজালাল উপশহর আবাসিক এলাকার ৯টি ব্লকে ৩৬টি স্পীডব্রেকার, শেখঘাট-নবাব রোড এলাকায় রয়েছে ২৩টি, কুমারপাড়া, রায়নগর, খাসদবীর, চাশনীপীরের মাজার এলাকায়ও কিলোমিটার প্রতি ৫ থেকে ১৩টি পর্যন্ত স্পীডব্রেকার লক্ষ্য করা গেছে। গড়ে শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার একই অবস্থা।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব জহিরুল ইসলাম মিশু বলেন, কিছু সংখ্যক মোটরবাইক ও গাড়ি চালকদের ওভারস্পীডের কারণে পাড়া মহল্লায় এইরকম যত্রতত্র স্পীডব্রেকার স্থাপন করা হচ্ছে। আমরা কখনোই স্পীডবেকার স্থাপনের পক্ষে না। বরং এগুলোই অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণ। অধিকাংশ স্পীডব্রেকার রং করা না থাকায় চালকরা এগুলো খেয়াল করতে পারেন না ফলে দূর্ঘটনার শিকার হন।
স্পীডব্রেকার-এর পরিবর্তে পাড়া মহল্লাগুলোতে ট্রাফিক সাইন স্থাপন করার পাশাপাশি জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম গ্রহনের পরামর্শ দেন নিরপাদ সড়কের এই নেতা।

কদমতলী স্বর্ণশিখা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ও এপেক্স ক্লাব অব রোজ গার্ডেনের সাবেক সভাপতি লায়েক মাহমুদ বলেন, আমাদের পাড়ায় ১২টিসহ আশ-পাশ মিলে আনুমানিক ২০টি স্পীডব্রেকার আছে। এগুলো থাকাতে আমরা অনাকাঙ্খিত অনেক দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাই। তবে অপরিকল্পিত ও অপ্রয়োজনীয় স্পীডব্রেকার নগরবাসীর জন্য বিরক্তিকর এবং বয়স্ক ও রোগীদের জন্য অসহ্য। এগুলো অপসারণ প্রয়োজন।

ঔষধ কোম্পানীতে চাকুরী সুবাদে সিলেটে আসা রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার জন্য সিলেট নতুন শহর, গত ৪/৫দিন থেকে বাসা খুঁজছি। নতুন একটা সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাসা খোঁজা লাগছে। তা হচ্ছে ‘স্পীডব্রেকার’। যে মহল্লায় ঢুকি, দেখি স্পীডব্রেকারে ভরপুর। আমার বাবা-মা বয়স্ক মানুষ, তাদের প্রায়ই ডাক্তারের কাছে আনা-নেয়া করতে হয়। এইসব ‘‘স্পীডব্রেকার’-এর কারণে গাড়িতে যে ঝাকুনি হবে তা উনারা হজম করতে পারবেন না। কোনো রোগীই পারার কথা নয়।

বিষয়টি নিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম-এর দৃষ্টি আকষর্ণ করলে তিনি বলেন, স্পীডব্রেকারের উপকার অপকার দুটোই আছে। তবে মানুষকে সচেতন করলে স্পীডব্রেকারের প্রয়োজন নেই।
এই নগরবীদ মনে করেন, বাসা-বাড়িতে আমরা যারা বসবাস করি তারা সড়কে উঠতে যদি সচেতন হই এবং চালকরা যদি পাড়া-মহল্লায় গতি কমিয়ে সতর্কভাবে গাড়ি চালান তাহলে স্পীডব্রেকারের প্রয়োজন পড়বে না। মানুষকে সচেতন করতে সিটি কর্পোরেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
শাবির পেছনে কবরস্থান সংলগ্ন সড়কে অনেকগুলো স্পীডব্রেকার আছে উল্লেখ করে ড. জহির বিন আলম বলেন, সকল স্পীডব্রেকারের কারণে গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে হয়, ফলে এই এলাকায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...