ফের ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে জঙ্গিরা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০২২, ৬:০৯ অপরাহ্ণ

কয়েক বছর ‘চুপচাপ’ থাকা জঙ্গিরা ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আদালত চত্বর থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাকে বলা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় জঙ্গি কার্যক্রম। আর এ ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনে ঘটিয়েছে জঙ্গি সংগঠনটি। আল-কায়েদা থেকে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা পেয়ে জঙ্গিরা কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে কি না তা যাচাই করছেন গোয়েন্দারা। নতুন এই জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। ২০১৭ সালে সংগঠনটির সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকার। এরপরও গোপনে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গড়ে তুলেছে শক্তিশালী জঙ্গি নেটওয়ার্ক।

আনসার আল ইসলামকে আন্তর্জাতিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী বলা হয়। আনসার আল ইসলাম ভারতীয় উপ-মহাদেশের আল-কায়েদার শাখা একিউআইএসের (আল-কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট) মতাদর্শে কার্যক্রম পরিচালনা করে। তারা হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক হামলায় সরাসরি অংশ নেয়।

বিগত কয়েক বছর ধরে এই সংগঠনের সহিংস কর্মকাণ্ড না থাকলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, আনসার আল ইসলাম ভেতরে ভেতরে সুসংগঠিত হওয়ার কাজ করছে। তারা যদি আবারও সহিংস কর্মকাণ্ডে ফিরে আসে তবে বাংলাদেশের জন্য তা বড় শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সম্প্রতি ঢাকার আদালত থেকে দিনে-দুপুরে জঙ্গি ছিনতাই করে তারা জানান দিতে চাচ্ছে সামনে বড় কোনো ঘটনা ঘটাবে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে যতগুলো জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী আনসার আল ইসলাম। সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ার চেষ্টা করে আসছিল।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সফল হয়েছে। এ ঘটনায় সংগঠনটির টপ টু বটম এখন উজ্জীবিত। এই উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস কাজে লাগিয়ে সংগঠনটি বড় কিছু করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার কোনো নির্দেশনা আনসার আল ইসলাম পেয়েছে কি না সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

জঙ্গি কর্মকাণ্ড অনুসরণকারী পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কোনো অপারেশন, হামলার ঘটনার পর জড়িত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও সংগঠনটির অন্য পর‌্যায়ের নেতাকর্মীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। মূলত কাট আউট পদ্ধতিতে কার্যক্রম পরিচালনার কারণেই তাদের শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছর ধরে নিজেদের পুরোনো ও প্রশিক্ষিত সদস্যদের একত্রিত করে বড় কোনো জঙ্গি কার্যক্রম করার জন্য চেষ্টা করে আসছে সংগঠনটি। নিজেদের সদস্যদের ছিনিয়ে নেওয়ার এই পরিকল্পনা হয় আরও কয়েক মাস আগে। সে চেষ্টা সফল হওয়ায় আদর্শিক ও মানসিকভাবে চাঙা রয়েছে আনসার আল ইসলাম। বড় কোনো জঙ্গি কার্যক্রম করার মতো শক্তি ও সদস্য এরই মধ্যে সংগঠনটি সংগ্রহ করে ফেলেছে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো মনে করছে, আগামী দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি ব্যস্ত থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর ওই সুযোগটাই বেছে নিতে চায় জঙ্গিরা। এরই অংশ হিসেবে ক্লোজড গ্রুপের মাধ্যমে তরুণদের ‘মগজধোলাই’ করছেন জঙ্গি নেতারা। এই মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘আনসার আল ইসলাম’ ও নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ (পূর্বাঞ্চলীয় হিন্দের জামাতুল আনসার)। আনসার আল ইসলামের অর্থনৈতিক ভিত দেশে মজবুত না হওয়ায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো হচ্ছে।

এদিকে, আবারও সামনে এসেছে বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নাম। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বা মূল পরিকল্পনাকারী মেজর জিয়া। ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই জঙ্গি এমন তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আনসার আল ইসলামের অধিকাংশ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে তিনি। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রায় এক দশকে তারা অন্তত চারবার জিয়ার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেও তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় তার অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তবে তাকে গ্রেপ্তারে বাহিনীর সদস্যরা পৌঁছানোর আগেই পালিয়ে যান তিনি। মেজর জিয়া দেশেই আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছেন, তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছেন না দায়িত্বশীলরা।

সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পলাতক জঙ্গিদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনাকারী মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে (২৪) আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তিনি রিমান্ডে রয়েছেন। তার কাছ থেকে কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এটি নির্মূল করা কঠিন, তবে আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...