সিলেটের খাদিমপাড়া ও টুকের বাজার ইউনিয়নে কে পাচ্ছেন নৌকা

মো. মতিউর রহমান,

  • প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:৪৩ পূর্বাহ্ণ


সিলেট সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নির্বাচনী তফসিল গত ২৬ জানুয়ারি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। এই ধাপে সিলেট সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা হলো ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন, ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়ন ও ৬নং টুকের বাজার ইউনিয়ন। আগামী ১৬ ই মার্চ বৃহস্পতিবার তিন ইউনিয়নে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে তৃণমূল নেতাকর্মীর সমর্থন পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন ও টুকের বাজার ইউনিয়নে কে হচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী, কে পাবেন শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রতীক নৌকা তা নিয়ে দুই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের তৃণমূলের মধ্যে চলছে জল্পনা-কল্পনা, এ নিয়ে হাটে ঘাটে চলছে চুলছেঁড়া বিশ্লেষণ।
আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী যাচাই-বাছাই করতে আজ শনিবার সকাল ১১ টায় সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের কাউন্সিল একসাথে ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদে অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলে ৩ টি ইউনিয়নের প্রতি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীলরা উপস্থিত হয়ে তাদের মতামত জানাবেন। কাউন্সিলে প্রার্থীদের মতামতের তালিকা সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের নিকট প্রেরণ করবেন।
৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়নে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম বিলাল। ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক, ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও জহিরিয়া এম ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সদস্য মো. আব্দুল কাদির (এলএলবি)।
৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. নজরুল ইসলাম বিলাল জানান, আমি এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলাম। আমার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ডে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। ৪ ফেব্রæয়ারী আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন কাউন্সিল হবে। আমি আশাকরি তৃণমূল নেতৃবৃন্দ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. আব্দুল কাদির জানান, ২০০৩ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আমরা বিরোধী দলে ছিলাম সেই সময় আমি অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সেসময়ে আমি খাদিমপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলাম। আমি দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই সাধারণ জনগণ চায় আমি নির্বাচন করতে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আমি খাদিমপাড়া ইউনিয়নকে স্মার্ট ইউনিয়নে রূপান্তরিত করতে চাই। এ কাউন্সিলে আমি আওয়ামী লীগের একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমি শতভাগ আশাবাদী আমার পক্ষে তৃণমূল নেতৃবৃন্দ তাদের মতামত দিবেন।
এদিকে ৬নং টুকের বাজার ইউনিয়নের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের ৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন, টুকের বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সিলেট ভ্যালির ২৩ টি চা বাগানের একাধিক বারের সভাপতি ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা, সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক স্কুল বিষয়ক সম্পাদক তুফায়েল আহমদ তালুকদার, সিলেট জেলা আওয়ামী যুবলীগ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় ক্রিকেট লীগের যুগ্ম সম্পাদক এহিয়া আহমদ সুমন।
৬নং টুকের বাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাজু গোয়ালা জানান, আমরা চা-শ্রমিকের সন্তানেরা রক্তে মাংসে আওয়ামী লীগ করি। চা শ্রমিকরা সব রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। মাননীয় নেত্রী যদি আমাকে নৌকা উপহার দেন, আর আমি যদি নির্বাচিত হই তাহলে সরকারের দেওয়া সকল বরাদ্দগুলো সমবন্টন করে বিতরণ করব। আমি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হয়ে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে থেকে অসহায় মানুষের সেবা করে আসছি। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে আমি আমার ইউনিয়নে গৃহবন্দী মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। আমি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। চা শ্রমিকের পাশাপাশি সাধারণ জনগনের দায়িত্ব নিয়ে আরো বেশি সেবা করতে চাই। নেত্রী যদি আমাকে নৌকা উপহার দেন তাহলে আমি শতভাগ আশাবাদী এই ইউনিয়নে জয়লাভ করব এবং মাননীয় নেত্রীকে এই ইউনিয়নের বিজয় উপহার দিব। আমি আশকরি তৃণমূল নেতৃবৃন্দ আমার পক্ষে মতামত দিবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তুফায়েল আহমদ তালুকদার জানান, ২০০০ সাল থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে জড়িত আছি। বর্তমানে সিলেট জেলা খেলাঘর আসরের যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব পালন করিতেছি। প্রতি বছর আমার নিজ তহবিল থেকে আমার ইউনিয়নে শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ ও মুসলমানদের বড় দুটি ঈদে আমি অসহায় মানুষের জন্য ঈদ উপহার হিসাবে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে থাকি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসবে আমার সাধ্য মত তাদেরকে সাহায্য করে থাকি। পাশাপাশি খেলাধুলায় নতুন প্রযন্মকে উৎসাহিত করে তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকি। সেই সুবাদে আপামর জনগনের সাথে আমার সু-সম্পর্ক থাকায় আমি বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার সাহস ও মনোবল পেয়েছি। মাননীয় নেত্রী যদি আমার হাতে নৌকা তুলে দেন তা হলে আমি নিশ্চয়ই জয়লাভ করব। আমি তৃণমূল নেতৃবৃন্দের মতামত চাই।
আরেক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী এহিয়া আহমদ সুমন জানান, একজন রাজনৈতিক কর্মীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন থাকে জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। আমার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিলো জনপ্রতিনিধি হয়ে মানবতার কল্যাণে এবং এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইউনিয়নবাসীর সুখে দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করার আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আমার ইউনিয়নবাসী ও রাজনৈতিক শুভাকাক্সক্ষী নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেছি। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য তারা আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি আশা করি আপনারা অতীতের ন্যায় সামনেও আমার পাশে থাকবেন। আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী, আমি আশাকরি আমার পক্ষে তৃনমূল নেতৃবৃন্দ রায় দিবেন।
জানতে চাইলে সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নিজাম উদ্দিন জানান, শনিবার খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদে সকাল ১১ টায় ৩ ইউনিয়নের তৃনমূল নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক হবে। তৃনমূল নেতৃবৃন্দের মতামত ঢাকা কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে পাঠানো হবে। পরে মাননীয় নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিবেন তিনিই হবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আশফাক আহমদের সাথে আলাপকালে তিনি দৈনিক জৈন্তা বার্তাকে জানান, শনিবার সিলেট সদর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের তৃনমূল নেতৃবৃন্দ নিয়ে আলোচনায় বসব। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মূলত তৃনমূলের মতামত আমরা ঢাকায় পাঠাব। ঢাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তিনি যাকে মনে করবেন তাকে মনোনয়ন দিবেন। আমরা নেত্রীর নির্দেশ মত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...