ঋণ বিতরণে উদাসীন ব্যাংক, কমছে বরাদ্দ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৩ জুন ২০২৩, ১০:১২ অপরাহ্ণ


প্রতি মৌসুমেই কমছে চামড়া কেনায় ঋণ বিতরণ। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি সংকটে এ খাত দিনকে দিন পিছিয়ে পড়ছে। চামড়া খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। যা ঋণের লক্ষ্য নির্ধারণ দেখলে বোঝা যায়। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে সর্বোচ্চ ডজন খানেক ব্যাংক ঋণ দেয়। আবার সেই লক্ষ্যের সামান্য অংশই ব্যবসয়ীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এ বছর কোরবানীর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণে ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ২৫৯ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ৪১ দশমিক ০৭ শতাংশ কম। গত বছর বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪৪৩ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১ ও ২০২০ সালে ছিল যথাক্রমে ৫৮৩ কোটি এবং ৬৪৪ কোটি টাকা। এতে দেখা যায়, প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে কমছে চামড়া খাতের ঋণ। আবার বরাদ্দকৃত অর্থের একেবারে ক্ষুদ্র একটা পায় চামড়া ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, চাহিদার ৭০ ভাগ ট্যানারি শিল্পের কাঁচামালের মূল যোগান আসে কোরবানির ঈদে। যার ওপরে ভর করেই সারা বছর সচল থাকে দেশের এ শিল্প। চামড়া সংগ্রহে পর্যাপ্ত নগদ অর্থের দরকার হয় ব্যবসায়ীদের। যা পূরণ করে থাকে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। এ বছর ১২টি ব্যাংক মিলে ২৫৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনতা ব্যাংক বেশি বরাদ্দ রেখেছে। মোট পরিমাণ ১০০ কোটি টাকা। সোনালী ব্যাংকের ২৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৩০ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৫ কোটি ৩১ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫ কোটি, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের ৬ কোটি ৫০ লাখ, সিটি ব্যাংকের মাত্র ২০ কোটি, এসসিসি ব্যাংকের ২ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘কোরবানির ঈদের চামড়ার জন্য অর্থবরাদ্দ দেয় কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু এটা শুভঙ্করের ফাঁকি। কেননা, বরাদ্দকৃত অর্থের মাত্র ১০ শতাংশ বন্টন হয়। সেটাও আবার যেসব ট্যানারি ব্যবসায়ীর সক্ষমতা থাকে কেবল তাদেরকেই পুনরায় ঋণ দেয় ব্যাংক। যারা বকেয়া পরিশোধ করতে পারে না তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করে কিছু অংশ ঋণ দেয়া হয়। প্রকৃতপক্ষে তারা নতুন ঋণ পায় না। এই কাতারে এই খাতে আগের যে টাকা বকেয়া আছে সেটা ব্লকে নিয়ে নতুন করে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা অর্থায়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে এই খাতের সংকট কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের প্রতিবছর চামড়া খাতে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক। কিন্তু বিতরণ কখনও ১০০ কোটি টাকা সীমা অতিক্রম করেনি।

ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘টাকা নিয়ে ট্যানারিগুলোর তা পরিশোধ না করার প্রবণতা রয়েছে। তবে ২ বা ৩ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে পুরনো ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেয়া হয়েছে। আগের টাকা পরিশোধে আগ্রহ দেখায় না যারা তারা নতুন ঋণ পায় না।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিতরণ হয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। এ ঋণের ৪৫ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তবে ব্যাংক যে টাকা ঋণ দেয় তার প্রায় এক তৃতীয়াংশ খেলাপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে চামড়া ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নতুন নীতিমালার আলোকে ঋণ দেয়া হয়। গত বছর কোরবানির ঈদে ঋণ নিয়ে যারা পরিশোধ করেছে তারা এবারও ঋণ পাবে। যদি তারা অর্ধেক ঋণ পরিশোধ করেন তাহলে ঋণও অর্ধেক পাবেন। চামড়া শিল্প রক্ষায় এ খাতে অর্থায়ন যেন সমস্যা না হয় এজন্য ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই বলেও মনে করেন এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...