সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা রাখতে চায়: উজরা জেয়া

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৩, ৮:০৫ অপরাহ্ণ


বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ কথা জানিয়েছেন সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। একই সঙ্গে

নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে মধ্যহ্নভোজ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন উজরা জেয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বলেও জানান উজরা। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসা নীতি ঘোষণার পর দেশটির জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে প্রথম বাংলাদেশ সফর করছেন উজরা জেয়া। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া চার দিনের সফরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছান। গতকাল বুধবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে এসে আজ সকাল থেকে একের পর এক মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করেন উজরা জেয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।

নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অঙ্গীকারের বিষয়ে তার মনোভাব জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি অন্য মন্ত্রীদের কাছ থেকে জোরালো প্রত্যয়ের কথা শুনেছি। পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গেও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি গতকাল ঢাকার নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তাদের পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকের পাশের সড়কে সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের সংঘাত, সহিংসতা ছাড়াই গতকালের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ শেষ হয়েছে।

এই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তিনি বলেন, গতকাল বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা। ভবিষ্যতেও এটির প্রতিফলন থাকবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর ব্যবস্থা নেবে—এমন আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, পাঁচ দশক ধরে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, তাতে তিনি সন্তুষ্ট।

যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

উজরা জেয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকেরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি এবং নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। তিনি বলেন, মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বিষয়ে, বিশেষ করে মতপ্রকাশের এবং সমাবেশের স্বাধীনতা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উজরা জেয়া।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, উজরা জেয়ার সঙ্গে বৈঠকে বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ বহুমাত্রিক ও নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করে, সেটা তাকে জানিয়েছেন। শ্রম আইনের সংশোধনে বাংলাদেশ গত এক দশকে কী অর্জন করেছে, সেটাও তুলে ধরেছেন। শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং তাঁদের অধিকারের বিষয়ে উদ্যোগ চলমান আছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

এ ছাড়া আগামী নির্বাচন, নাগরিক অধিকার, মানব পাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রসচিব। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিকে র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...