দিল্লিতে কথা বলতে মানা, ভিয়েতনামে গিয়ে যা বললেন বাইডেন

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৮:১৬ পূর্বাহ্ণ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংবাদ সম্মেলন করতে পছন্দ করেন না। নিজের ক্ষমতার ৯ বছরেও তিনি দেশে কোনো সংবাদ সম্মেলন করেননি। অন্য দেশে গেলেও ভারতের শর্ত থাকে, সাংবাদিকরা মোদিকে কোনো প্রশ্ন করতে পারবেন না।

যদিও গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় মোদি বাধ্য হয়েছিলেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে। যুক্তরাষ্ট্র ওই সফরের আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভারতকে চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু এবার নিজ দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সংবাদ সম্মেলন করতে দিলেন না মোদি।

যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল মোদি-বাইডেন দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর মার্কিন প্রথা অনুযায়ী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে। যেকোনো দেশের নেতার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর হোয়াইট হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা যুক্তরাষ্ট্রের রীতি। কিন্তু জি-২০ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে আসা বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর কোনো রকম প্রশ্নোত্তর পর্বের মুখোমুখি হতে মোদি রাজি হননি।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সফররত মার্কিন সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছিল, মোদি-বাইডেন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন পর্ব থাকবে না। এমনকি বাইডেনও আলাদাভাবে কোনো সংবাদ সম্মেলন করতে পারবেন না। সিএনএন তা নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রচার করেছিল।

পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয় ভিয়েতনামে পৌঁছে বাইডেন সাংবাদিক সম্মেলন করবেন।

এরপর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভিয়েতনামের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েই ভারত প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্ব আরও জোরদার কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে আমি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যা আমি সব সময় করে থাকি, এবারও তা-ই করেছি। শক্তিশালী ও সমৃদ্ধিশালী দেশ গড়ে তুলতে মানবাধিকারকে সম্মান করা, নাগরিক সমাজ ও স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা থাকা যে গুরুত্বপূর্ণ, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছি।

একই সঙ্গে জি-২০ সম্মেলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্ব ও আতিথেয়তার প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন বাইডেন।

জি-২০ সম্মেলন শেষ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিরোধীরা এ নিয়ে সরব হয়েছেন। হ্যানয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাইডেনের মন্তব্যের ক্লিপিং দিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ রোববার গভীর রাতে ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) লেখেন, ‘বাইডেনকে মোদি বলেছিলেন, প্রেস কনফারেন্স করব না, করতেও দেব না। কিন্তু তা কাজে এল না। ভারতে মোদির মুখের ওপর বাইডেন কী বলেছেন, ভিয়েতনামে গিয়ে সেটাই তিনি জানিয়ে দিলেন। কী সেই কথা? নাগরিক সমাজ ও মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকা ও মানবাধিকারকে সম্মান দেখানো জরুরি।’

দিল্লিতে বাইডেন-মোদি বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পরিষদের ইন্দো-প্যাসিফিকবিষয়ক কো-অর্ডিনেটর কার্ট ক্যাম্পবেল সফররত সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। তা নিয়ে নেতারা আলোচনা করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র কখনো অন্য দেশকে এই বিষয়ে উপদেশ দেয় না। সম্পর্কে ভদ্রতা-নম্রতা বজায় রাখা জরুরি। তবে সেই সঙ্গে তিনি এ কথাও বলেছিলেন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে কঠিন প্রশ্ন থাকলে তা জিজ্ঞাসা করা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।

এর আগে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা তাদের একাধিক সমীক্ষা রিপোর্টে ভারতে গণতন্ত্রের হাল, সংখ্যালঘুদের উপর ‘পীড়ন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ২০২১ আমেরিকা প্রশাসনের সাহায্যপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ফ্রিডম হাউসে’র রিপোর্টে ভারতীয় গণতন্ত্রকে ‘আংশিক গণতন্ত্রে’র তকমা দেয়া হয়েছিল। ভারত সরকার সে সব রিপোর্টকে একপাক্ষিক বলে দাবি করে। তার পরেও বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের তকমা পাওয়া ভারতে সমানাধিকার, সাম্যের মতো ধারণার বাস্তব প্রতিফলন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ওয়াশিংটন। এ বার সরাসরি ভারতকে দায়ী করা না হলেও, কৌশলে বাইডেন পুরনো প্রসঙ্গগুলি মোদীকে স্মরণ করিয়ে দিলেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...