বাংলাদেশে কারাবন্দি সাংবাদিকদের দ্রুত মুক্তির দাবীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ মহাসচিব ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে অভিযোগ

মেতিয়ার চৌধুরী লন্ডন,

  • প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গির। এই ক্যাম্পেইনে সাড়াদিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকরা বাংলাদেশের কারাবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তির দাবীতে আওয়াজ তুলছেন, সেই সাথে একুশটি দেশের ৭০০ শতাধিক সাংবাদিক একত্রে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব ও ইউরোপীয়ান পার্লামেন্ট বরাবরে বাংলাদেশের সাংবাদিক নিপিড়নের চিত্র তুলে ধরে অভিযোগ করেছেন।

দস্তগীর জাহাঙ্গির বিশ্বব্যাপী এই ক্যাম্পেইন জোরদার করতে বিশ্বের প্রতিটি দেশে সাংবাদিক ও মানবতাবাদীদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন আমি নিজে একজন সাংবাদিক, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং মতপ্রকাশের অধিকারের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে খুবই সচেতন, যেটির উপর আমাদের পেশা গুরুত্ব বহন করে। উদ্বেগজনকভাবে বাংলাদেশের ঘটনা যেখানে মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বর্তমানে অসংখ্য সাংবাদিক কারাগারে বন্দী রয়েছেন। তা এই কাজের জন্য একটি গুরুতর আঘাতের চিহ্ন বহন করে। কোনো জামিন শুনানি ছাড়াই-যে কোনো ন্যায্য আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি-এই ব্যক্তিদের অন্যায়ভাবে তাদের পরিবার, তাদের জীবিকা এবং তাদের দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হচ্ছে।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রয়োগ করা যেকোনো কার্যকরী গণতন্ত্রের জন্য অত্যাবশ্যক। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স রিপোর্ট অনুযায়ী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ইস্যুতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৫তম। একটি মর্মান্তিক পরিসংখ্যান যা এই কঠোর বাস্তবতা প্রকাশ করে। একসাথে, আমাদের অবশ্যই এই অন্যায় চর্চার বিরোধিতা করতে হবে এবং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে বিজয়ী করতে হবে।

এই আবেদনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিব এবং ইইউ পার্লামেন্টের স্পিকারকে সম্বোধন করা হয়েছে। আমাদের কল টু অ্যাকশন মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং চাপের প্রতীক। একসাথে, আমরা এই অত্যন্ত সম্মানিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে এই সাংবাদিকদের মুক্তির জন্য হস্তক্ষেপ করার জন্য এবং সহজতর করার জন্য জোরালোভাবে অনুরোধ করছি।

সক্রিয় হওয়ার সময় এখন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে ওকালতি হল সত্য, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের পক্ষে ওকালতি, যা বর্তমানে বাংলাদেশে হুমকির মুখে। এই পিটিশনে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে, আপনি বাংলাদেশের সেই সব সাংবাদিকদের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে একটি আন্দোলনে যোগ দিচ্ছেন যারা কোনো জামিন শুনানি ছাড়াই অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ রয়েছেন। একসাথে, আমরা নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারি এবং বাংলাদেশে একটি নিরাপদ ও স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য লড়াই করতে পারি। দয়া করে, আজ এই পিটিশনে স্বাক্ষর করুন।

বাংলাদেশে ড. ইউনূসের শাসনামলে মিডিয়ার অবস্থা শোচনীয় হয়ে উঠেছে। সাংবাদিকরা এখন প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তু, মামলা, গ্রেফতার, এমনকি হত্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অন্যদিকে দাগী অপরাধী ও জঙ্গিরা স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই হলো বাংলাদেশের বাস্তবতা। গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশে মিডিয়া দমন একটি উদ্বেগজনক শিখরে পৌঁছেছে। মামলা, হামলা, গ্রেপ্তার, চাকরি থেকে বরখাস্ত, আর্থিক নিপীড়নের মাধ্যমে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করা হচ্ছে। সংবাদপত্র অফিসে হামলা, সাংবাদিকদের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে চূর্ণ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের মালিকানাও জোরপূর্বক দখল করা হচ্ছে। আজ সাংবাদিকতা অপরাধের সমতুল্য হয়ে গেছে! গত পাঁচ মাসে, সরকার গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ নিতে নৃশংস কৌশল প্রয়োগ করেছে।

এযাবত সমগ্র দেশে ৬ শতাধিক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, ৫০টিরও বেশী মিডিয়া ও প্রেস অফিসে হামলা, ৬ জন সাংবাদিক খুন, ১৮জন সাংবাদিক গ্রেফতার, শতাধিক সাংবাদিক আহত, হাজারেরও উপরে সাংবাদিক চাকরিচ্যুত বা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ৯৬ জন সাংবাদিক আর্থিক রেকর্ড প্রকাশ করতে বলেছেন, ১৬৮জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে, ১৮ সাংবাদিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে, ৮৩ জন সাংবাদিকের প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে, বেশির ভাগ মিডিয়া হাউস জোর করে দখল করে নিয়েছ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কি এই রকম? সরকার সত্যের সমস্ত পথ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর বলে মনে হচ্ছে। সাংবাদিকরা নজিরবিহীন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতাকে এভাবে নির্মূল করা হলে দেশ ও জনগণ উভয়ের জন্যই অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...