সব
এম কে মিলন, লন্ডন,

“ভিয়েতনামের সেই চিরপরিচিত যুদ্ধের কথা একটু করে হলেও লেখাপড়া করা প্রায় সবার গোচরীভূত। এই হানাহানির মাত্রা, তীব্রতা, জঘন্যতা, ক্লেশ, গ্লানি ইত্যাদি আধুনিক বর্বরতার একটা আধুনিক স্বরূপকে উন্মোচিত করেছিলো। সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের যবনিকার বীজ বপনে বিশ্ববিখ্যাত ভাষাবিদ, দার্শনিক এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক সমালোচক নোয়াম চমস্কির মানুষ ও প্রাণীর মধ্যকার মূল পার্থক্যের তত্ত্ব ও এ আবিস্কারের বাস্তবতা অতি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলো অন্ততঃ সেই সময়কার প্রেক্ষাপটে। মানুষের স্বভাব কি বদলায়? ভিন্নভিন্ন অজুহাতে নানা আঙ্গিকে সংঘাত, হানাহানি নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা ইতযাদির পুনরাবৃত্তি ঘটে চলেছে এ ভূবনের এখানে সেখানে। কোথাও কোথাও এসব যেন শিকড় গেড়ে বসেছে। বর্ণিত পার্থক্যের রেশ ধরে বলছি যে, চিন্তা-ভাবনা ও সৃজনের শক্তি প্রসূত মনুষ্যকূলের আচরণ-বিচরণ, মানব সভ্যতার আয়োজন ও সৃষ্টিতে ভাবের আদান-প্রদানের সর্বোত্তম ও অপরিসীম মাধ্যম হচ্ছে কথা বলার ক্ষমতা। এই কথা বলা থেকে শুরু করে কণ্ঠনিঃসৃত সুরের মাধুর্য শতসহস্র বছর হতে মানুষকে বিমোহিত, অভিভূত, সম্মোহিত বিহ্বল, ভাবাবিষ্ট, পরাভূত, মোহগ্রস্ত, ও মুগ্ধ এবং বশীভূত ও বিভোর করে আসছে। এ রকম শতকোটির মধ্যে, সুরসংযোজিত প্রায় অমর বাণীসম্বলিত একটি কালজয়ী গান হলো, “কফি হাউসের এই আড্ডাটা আজ আর নেই”। বিদ্যালয়, মহাবিদ্যলয় অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা মাড়িয়েছেন এমন প্রায় অধিকাংশ মানুষের অন্তরকে কেবল নাড়া নয়, আবেগতাড়িত করে, উদ্বেলিত করে তুলে, স্মৃতিকাতরতায় নিবিষ্ট করে। এ গানটিতে বিভোর হয়ে, এটির বশীভূত হয়ে থাকেন অসংখ্য মানুষ।
এ গানটির পটভূমি সম্বন্ধে একপ্রকার বাস্তবসম্মত উপায়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবগত হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহের গভীরতা বা ধৈর্য্যের ক্ষমতাকে প্রশংসা করে অনুরোধ রাখা যায় যে, সম্ভব হলে গানটি গীত হবার সময়ে উপস্থিত থাকলে বা হচ্ছে বলে ধারণা থাকলে কোনো ধরণের নাচানাচি, কুদাকুদি বা বেলাল্লাপনায় আস্কারা দেওয়া তো ঠিকই নয়, বরঞ্চ মৃদুভাবে হলেও ‘হস্তক্ষেপ বলা হচ্ছে না’, অন্ততঃ এ ধরণের আচরণে বাধ সাধার প্রয়াস করা একান্ত প্রয়োজন, ফর-গড-সেইক। শুনে ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, গানটা মোটেও সরাসরি কোনো বাস্তব ঘটনাপ্রসূত নয়, পুরোপুরি কাল্পনিক না হলেও পূর্বে ঘটেছে এমন ঘটনা সম্বন্ধে আংশিক হলেও সম্যক অভিজ্ঞতার আলোকে অভাবনীয় অতীব তাড়না থেকে পরিকল্পিত হলেও আকস্মিক সংযোগের অমৃত বচসা কিংবা বাদানুবাদের আবহসৃষ্ট ভালবাসা ও দায়বদ্ধতা আর অবশ্যই সৃজনশীলতার তাগিদে তাৎক্ষণিক দুটি শ্লোকের নিসঃরণ আর মূহূর্তের মধ্যেই গুনগুনিয়ে এটুকুনে প্রাণ-সঞ্চারের মধ্য দিয়েই এমন একটি অতি বিশ্বাসযোগ্য, শ্রুতিমধুর, তনু মনকে আঁকড়ে ধরে এমন অথচ জীবনমুখী অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে প্রায় সবার জীবনের সঙ্গে খানিকটা হলেও সামঞ্জস্য বা সঙ্গতিপূর্ণ স্মৃতি রোমন্থনের হৃদয়গ্রাহী মৌলিক একটি উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হয়ে প্রায় সবাইকে প্রভাবিত, আন্দোলিত, আলোড়িত করে আসছে যুগযুগ ধরে এবং কিঞ্চিৎ হলেও ক্ষণিকের জন্যে ভাবুক করে ফিরিয়ে নিয়ে যায় জীবন-যৌবনের সেই স্বর্ণক্ষণে। তাই বলে কি এমন বেদনাদায়ক কল্পনাপটকে ভাগাভাগি করতে গিয়ে উন্মাদনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে যথাসম্ভব স্বীয় স্বভাবগত স্বরূপকে স্বীকারের স্বাক্ষর রাখাটা কি উচিত হবে? আদৌ নয়।
আপাতদৃষ্টিতে মূলত কাল্পনিক হলেও গানটির প্রায় শুরু থেকে অনেকটাঅব্দি বেশ কয়েকটি খণ্ডচিত্রে অনুধাবন করা কিংবা উপলব্ধিতে গ্রোথিতো হওয়ার মত পীড়াদায়ক ঘটনাবলীর স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এমতাবস্থায় কোনো ধরণের বেলাল্লাপনা বা বেহায়াপনা; শোভনীয়, সুস্থির মানসিকতা বা সভ্য আচরণের পর্যায়ে পড়ে কি না তা আশু বিবেচ্য।
সুতরাং, পারলে এমন “হীন বলাটা হয়তো ঠিক হবে না”, নীচ ও শুদ্ধাচার এমনকি বিবেক বিবর্জিত মনোভাব ও আচরণ প্রদর্শন থেকে নিবৃত থাকা এবং নিবৃত রাখার সম্ভাব্য প্রচার ও প্রসারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করাটা গানটির প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরই শামিল। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অনেকেরই তরফ থেকে এটা কেবল অনুরোধই নয়, অনুনয়ও। অন্ততঃ এ গানটির ভাবার্থ, মর্মার্থ, যথার্থতা, তাৎক্ষনিক বা সার্বক্ষণিক প্রভাব, রচয়িতা, সুরারোপকারী, গায়ক, বাদকগন, সঙ্গীত পরিচালক, প্রযোজকের মর্যাদা সর্বোপরি এ গানটির মর্যাদা রক্ষার্থে।”