সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশি ৬ সেনা নিহত: আইএসপিআর

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

সুদানের আবেইতে জাতিসংঘ (ইউএন) ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৮ জন। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে।

প্রাথমিকভাবে হতাহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আইএসপিআর জানিয়েছে, সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

যুদ্ধবিধস্ত সুদানে কয়েক বছর ধরে শান্তিরক্ষী মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশের সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।

আফ্রিকার দেশটিতে গত দুই বছর ধরে সরকারের সঙ্গে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ ) নামের সশস্ত্র একটি গোষ্ঠী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির বিভিন্ন অংশে প্রায়ই সশস্ত্র হামলা ও পাল্টা হামলায় হতাহতের খবর আসছে।

উত্তর ও দক্ষিণ সুদানের মাঝে অবস্থিত ‘আবেই’ একটি সংঘাতপ্রবণ অঞ্চল। উভয় দেশ এ অঞ্চলের মালিকানা দাবি করে। ফলে এখানে প্রায়ই সংঘাত হয়। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী এখানে জাতিসংঘ মিশনে কাজ করছে।

প্রধান উপদেষ্টার শোক

সুদানের বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাতবরণ এবং আরও আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।’

প্রধান উপদেষ্টা নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।

বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

ড্রোন দিয়ে হামলা

বার্তা সংস্থা এএফপি হাসপাতাল সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, সুদানের কোরদোফানের কাদুগলি এলাকায় জাতিসংঘের ভবনে হামলা হয়েছে। এ হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।

এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে সুদানের সেনাসমর্থিত সরকার। সরকারের এক বিবৃতিতে, এ হামলার জন্য সরকারবিরোধী আধা সামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে দায়ী করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ড্রোন দিয়ে জাতিসংঘের ওই ভবনে হামলা চালানো হয়েছে।

বিবৃতিতে সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সার্বভৌম পরিষদ (সোভারেনটি কাউন্সিল) এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনা বৃদ্ধি’ বলে উল্লেখ করেছে।

কাদুগলি শহরে গত নভেম্বরের শুরুতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়। শহরটি প্রায় দেড় বছর ধরে আরএসএফ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

কোরদোফান একটি বিস্তৃত কৃষিভিত্তিক অঞ্চল, যা তিনটি রাজ্যে বিভক্ত। এটি পশ্চিমে আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর এবং উত্তর, পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী-নিয়ন্ত্রিত এলাকার মাঝখানে অবস্থিত।

সরবরাহ লাইন বজায় রাখা ও সেনা স্থানান্তরের জন্য কাদুগলির অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আধা সামরিক আরএসএফ দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে তারা যোদ্ধা, ড্রোন ও মিত্র মিলিশিয়া মোতায়েন করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, সুদানের মধ্যাঞ্চলের চারপাশে সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেদ করার লক্ষ্যেই আরএসএফ এই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যাতে খার্তুম পুনর্দখলের পথ তৈরি করা যায়।

আরএসএফের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

বিবিসি জানায়, আরএসএফ ২০১৩ সালে গঠিত হয়। মূলত জানজাওয়িদ মিলিশিয়ারা আরএসএফ গঠন করে। এই মিলিশিয়ারা দারফুরে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়েছিল। দারফুরের কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান, অ-আরব জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

এরপর সুদানের জেনারেল হামদান দাগালো (হেমেদতি নামে পরিচিত) আরএসএফকে একটি শক্তিশালী বাহিনী রূপান্তরিত করেন। তিনি আরএসএফের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই আরএসএফ ইয়েমেন ও লিবিয়ায় সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জেনারেল দাগালো সুদানের কিছু স্বর্ণখনিও নিয়ন্ত্রণ করেন। অভিযোগ আছে যে তিনি এই ধাতু সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) পাচার করেন।

সুদানের সেনাবাহিনীর অভিযোগ, আরএসএফকে সমর্থন দেয়ে আমিরাত। আমিরাতের বিরুদ্ধে ড্রোন হামলা চালানোর অভিযোগও করে সেনাবাহিনী। যদিও তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় দেশে আমিরাত এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সুদানের সেনাবাহিনী পূর্ব লিবিয়ার শক্তিশালী নেতা জেনারেল খলিফা হাফতারকেও আরএসএফকে সমর্থন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছে। হাফতার সুদানে অস্ত্র পাচারে সাহায্য করেছেন এবং আরএসএফের পক্ষে যোদ্ধা পাঠিয়েছেন বলেও অভিযোগ সেনাবাহিনীর।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh