গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র, ইসরাইলি হামলায় নিহত ৮০

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৫, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

তীব্র খাদ্য সংকট ও মানবিক অবরোধের মধ্যে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় গাজায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৮ জুলাই) গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে মারা গেছে আরও ১৪ জন, যাদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে ১৪৭ জনের, যার মধ্যে ৮৮ জনই শিশু।

মার্চে গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল, যা মে মাসে সামান্য শিথিল হলেও মানবিক সহায়তার প্রবেশ অত্যন্ত সীমিত। ২.৩ মিলিয়ন মানুষের এই উপত্যকায় তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে, যা জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গণ-অনাহারের ঝুঁকি’ হিসেবে সতর্ক করে আসছে।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “গাজায় মানুষ এখন মৃতও নয়, জীবিতও নয়—চলন্ত লাশের মতো।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এখন আর শুধু নিন্দা যথেষ্ট নয়; অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দরকার। তাহলেই সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হবে।”

এমন সংকটে সোমবার গাজায় কিছু সহায়তা ট্রাক কারেম আবু সালেম ও জিকিম রোড দিয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, ক্ষুধার্ত মানুষজন ট্রাকগুলো ঘিরে লুটপাট শুরু করে। আল-জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানান, “মানুষ এখন অপেক্ষা করতে পারছে না। তাদের সন্তানেরা দিনের পর দিন অনাহারে আছে।”

একই দিনে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৮৮ জন নিহত হন। চিকিৎসা সূত্রে জানা যায়, এদের মধ্যে ৪০ জনই খাদ্য ও সহায়তার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। আল-শিফা হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানান, শিশু মোহাম্মদ ইব্রাহিম আদাস বেবি ফর্মুলা না পেয়ে অপুষ্টিতে মারা গেছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস দাবি করেছে, ৪০ হাজারের বেশি এক বছরের কম বয়সী শিশু এই সংকটে মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছে। তাদের দাবি, গত ১৫০ দিন ধরে শিশু খাদ্য প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, “ইসরায়েল যে সামান্য সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় এক ফোঁটা সমুদ্রে মাত্র। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এই সহায়তার চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়।”

এই পরিস্থিতিতে সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “অনেক মানুষ অনাহারে ভুগছে এবং ইসরায়েল এই পরিস্থিতির দায় এড়াতে পারে না। আমরা এমন খাদ্য কেন্দ্র গড়ব, যেখানে কেউ বাধাগ্রস্ত হবে না।” তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের সঙ্গে গাজায় খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা পাঠাবে।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একই দিন এক বক্তব্যে বলেন, “গাজায় কোনো অনাহার নেই।” তিনি হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে বলেন, “মানবিক সহায়তা আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হবে।”

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত মানবিক সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) গাজায় কার্যক্রম শুরু করলেও, জাতিসংঘসহ একাধিক সংস্থা তাদের কার্যক্রম ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

গাজার তীব্র খাদ্য সংকট, শিশু মৃত্যু ও অবরোধ পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছে। মানবিক সহায়তা অব্যাহতভাবে ব্যাহত হলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে—এমনটাই আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠন।

সূত্র: আল জাজিরা

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh