সব
লাইফস্টাইল ডেস্ক,
করোনার এই মহামারীর পরিস্থিতিতে অনেকেরই রাতের ঘুম পিছিয়ে গেছে। সারারাত মোবাইল বা ল্যাপটপে গেম খেলতে গিয়ে ঘুম উধাও। ঘুম আসতে আসতে প্রায় ভোর হয়ে যায়। তারপর বেলা গড়িয়ে গেলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে শরীর-মন কোনোটাই চায় না। ফলে সারাদিনই ঘুমের রেশ থেকে যায়।
বারবার লকডাউনের ফলে স্কুল-কলেজ বন্ধ বটে; কিন্তু তা আর কতদিন? ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ বদলে গেলে তার প্রভাব পড়বে রোজকার জীবনেও। এত গেল ইচ্ছে করে দেরিতে ঘুমনোর কথা, কিন্তু এমন অনেক মানুষ আছেন যাদের জীবিকার কারণে রাত জেগে কাজ করতে হয়। এদের সবারই জীবনঘড়ির সময় উল্টে-পাল্টে যায়।
এক-আধ দিন রাতে ঘুম না হলে বা রাত জেগে কাজকর্ম করলে খুব অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কেউ যদি রাতের পর রাত জেগে কাজকর্ম করেন বা মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে গেম খেলেন বা সোশ্যাল সাইটে আড্ডা দিয়েই চলেন, তাদের ঘুমের সময় বদলে যায়। হয়তো রাত ১টা বা ২টা পর্যন্ত জেগে খেলে আড্ডা দিয়ে তারপর ঘুমালেন, দিনে বেশি সময় ঘুমিয়ে নিলেন, এটা মোটেও ঠিক নয়। এতে নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রাত জাগাকে কার্সিনোজেনের সঙ্গে তুলনা করে থাকে। অর্থাৎ এটা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান হিসেবে কাজ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার-বিষয়ক গবেষণা বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের তথ্য মতে, যখন সূর্যের আলো থাকে না তখন শরীরকে কাজ করতে বাধ্য করা বা জাগিয়ে রাখা শরীরে মেলাটোনিন হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। আর এই মেলাটোনিনই মানুষের দেহে টিউমারের বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে তাদের ধারণা, রাত জাগা মানুষদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
সারারাত জেগে থাকলে মন ও শরীরে খিটখিটে স্বভাব, বিষণ্ণতা, হঠাৎ ভীষণ রেগে যাওয়ার মতো অসুবিধার পাশাপাশি রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, হার্টের সমস্যার মতো গুরুতর শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
সারা দিনের কাজকর্ম এবং সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি্র প্রভাবে দিনের বেলায় যে কোষগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, রাতে ঘুমের সময় সেগুলি মেরামত হয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে। মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ এই বায়োলজিক্যাল ক্লককে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও কারণে জীবন ঘড়ির কাঁটা জোর করে উল্টোদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করলে মন-মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। সারা দিনের স্বাভাবিক কাজকর্মে তার প্রভাব পড়ে। সারা দিন কাজকর্ম আর রাতে ঘুম, এটাই আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ। এই ছন্দেই কাজ আজীবন কাজ করে যায় দেহের প্রতিটি কোষ, শারীরিক প্রক্রিয়া এবং স্নায়ুতন্ত্র,।
মানুষের শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক নিয়ন্ত্রণকারী জিন থেকে এক বিশেষ প্রোটিন শরীরের কোষে কোষে জমা হয় রাতে। তাই ঘুম নেমে আসে। দিনের বেলায় ঘুম ভাঙলে আর কোষের মধ্যে প্রোটিন খুঁজে পাওয়া যায় না।
তাই মানুষসহ সব প্রাণীর শরীরে ঘুম নেমে আসার এই একই ফর্মুলা। নিয়ম মেনে রাতে ঘুম, দিনে কাজকর্ম এই ছন্দ মেনে চললে শরীরের হজম শক্তি ঠিক থাকার পাশাপাশি, হরমোনের নির্দিষ্ট মাত্রা বজায় থাকে, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকে এবং সমগ্র শরীরবৃত্তীয় কাজকর্ম নির্দিষ্ট ছন্দ মেনে চলে।
কোনও কারণে ঘুমের সময় বদলে গেলে শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লকের উপর চাপ পড়ে। পুরো সিস্টেমটাই ওলট পালট হয়ে বিগড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলস্বরূপ বেড়ে যায় অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি। তাই রাতের ঘুম রাতেই হোক, বেলা পর্যন্ত পড়ে পড়ে না সকালে ঘুম ভাঙুক। যাদের রাতের ডিউটি সেরে ভোর হয়ে যায় বিছানায় যেতে, তারা চেষ্টা করুন ৫–৬ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নেয়ার।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03