বিএনপিতে কোণঠাসা জ্যেষ্ঠ নেতারা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২০, ১১:১২ পূর্বাহ্ণ

দল পরিচালনা এবং পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আস্থাভাজন জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপেক্ষা করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দ-প্রাপ্ত খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়েছেন প্রায় সাত মাস আগে। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খালেদা জিয়া এরই মধ্যে দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু অভিমত তুলে ধরেছেন দলীয় নেতাদের কাছে। তাতে দল পরিচালনায় কিছু ভুল পদক্ষেপ চিহ্নিত করার পাশাপাশি সংগঠন পুনর্গঠনের লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনাও দেন তিনি। কিন্তু নানা অজুহাতে এবং তারেক রহমানের প্রভাবের কারণে কাজে আসছে না সেসব নির্দেশনা। এমনকি খালেদা জিয়া দলের যে নেতাদের কাছে তার অভিমত ও নির্দেশনা তুলে ধরেছেন, সেই নেতারাই উল্টো কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন দলে।

বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের দাবি, খালেদা জিয়ার মত উপেক্ষা করেই বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। তাছাড়া নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দল পরিচালনার ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হচ্ছে দলের বেশির ভাগ জ্যেষ্ঠ নেতাকে। পুরোনো নেতাদের এড়িয়ে নব্বই দশকের ছাত্রদল নেতাদের দিয়ে দল পুনর্গঠনে মনোযোগ দিয়েছেন তারেক রহমান। এ সুযোগে তারেক রহমানকে সামনে রেখে নিজস্ব বলয় গড়ে তুলছেন দলের দু-তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি এখন তারেক রহমানের পুরো নিয়ন্ত্রণে। দলীয় সব সিদ্ধান্ত তারেক একাই নিচ্ছেন। তারেক রহমানের বাইরে কিছু বলতে বা করতে পারছেন না বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। দলের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারেক রহমান সবার সঙ্গে কথা বলেন এমন প্রচার থাকলেও কার্যত একাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তার পছন্দের এমন দু-একজন নেতার পরামর্শকে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন, যে নেতাদের কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি নেই।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ, বাসায় গৃহবন্দির মতো অবস্থান করছেন। রাজনীতি থেকে দূরে আছেন প্রায় দুই বছর হতে চলল। এ অবস্থায় দল পুনর্গঠনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তারেক রহমানই কাজ করবেন এটাই স্বাভাবিক। বিএনপিতে অনেক দিন ধরে কমিটি হয় না, এখানে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুলভ্রান্তি হয়, যা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখতে হবে। তবে এটা ঠিক, এত দিন দলের জন্য যারা মামলা-হামলা, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন তাদের উপেক্ষা করলে দলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক হতে হবে দলকে।’ দলে সিন্ডিকেট বা দুষ্টচক্র প্রসঙ্গে তিনি জানান, এটা রাজনীতিতে থাকে, তবে বেশিমাত্রায় হলে জট লেগে যেতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় দলের মহাসচিব অনেকটা উপেক্ষিতই থাকছেন। সেক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছেন নয়াপল্টনে দলের দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগে সাংগঠনিক নানা ধরনের কাজ করাতেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের মাধ্যমে। খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত এ নেতা দলীয় অনেক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে রাখতেন খালেদা জিয়ার চাহিদা অনুযায়ী। প্রচার আছে দল গোছানোর ক্ষেত্রে তিনি সব বলয়ের প্রভাবমুক্ত থেকে খালেদা জিয়ার আস্থা অর্জন করেছিলেন। তারেক রহমানের প্রভাবের কারণে তিনি আর সে অবস্থানে নেই। সারা দেশে দলীয় কোন্দল এখন অনেক বেশি। সম্প্রতি ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে ২০ নেতাকর্মী আহত হন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দলের অভ্যন্তরে ঘরোয়া খেলা এখন অনেক বেশি চলছে। আগে আমরা তেমনটা খুব বেশি দেখিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘দলের ভেতরে এমন ঘরোয়া খেলা বন্ধ না হলে বিএনপিকে পাওয়ারে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে।’

জানা যায়, গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় আর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বসেন। অন্যদিকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়াপল্টনে বসে সিদ্ধান্ত নেন। দুজনেই আলাদাভাবে নির্দেশনা নেন তারেক রহমানের। তবে এসব বিষয়ে অন্ধকারে থাকেন দলের অন্য নেতারা। এ নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে অসন্তোষও আছে। তবে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা এসব তথ্য জানালেও কেউ নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি নন।

দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তারেক সাহেব এখন বুড়োদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। সংস্কারবাদীদের নিয়ে দল গড়ছেন তিনি। তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন। এসবই ঠিক আছে। তবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বগুণ এবং নেতা নির্বাচন পদ্ধতিতে কোনো পক্ষই বেশি বিক্ষোভে থাকত না। সবাইকে ম্যানেজ করেই দল পরিচালনায় গুরুত্ব দিতেন চেয়ারপারসন। কিন্তু তারেক সাহেবের ডেম কেয়ার পলিসি বিএনপিকে খাদের কিনারে দাঁড় করাবে।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারেকের নিজ জেলা বগুড়ায় তিন দফা কমিটি ঘোষণা করেও বিক্ষোভ এড়াতে পারেননি। বগুড়ার সবকটি কমিটি গঠনের পর পার্টি অফিসে তালা মারার ঘঠনা ঘটেছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অবশ্য প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দেখে দেখে খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ নেতাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে, এমন তথ্য ঠিক নয়। চেয়ারপারসনের অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিএনপিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন তাকেই গুরুত্ব দেবেন বা দায়িত্ব দেবেন, এটাই নিয়ম। তবে এ নিয়ে ভালো-মন্দ বলার সময় আসেনি।’

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...