শীতের সবজির সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও দাম চড়া

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০২০, ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

শীতের সবজি বাজারে উঠেছে প্রচুর পরিমাণে। অর্থাৎ সরবরাহে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাজারে এই দরকারি পণ্য কিনতে গেলেই নাভিশ্বাস ক্রেতাদের। বিশেষ করে, যাদের আয় বাড়েনি তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সবজি কিনতেই পারছেন না। ক্রেতাদের অভিযোগ, সবজি দেশে উৎপাদন হয়। বাজারের দিকে তাকালে মনে হয় উৎপাদনও ভালো। কিন্তু দামের দিকে তাকালে হতাশ হতে হয়। সবজির সরবরাহের তুলনায় দাম অন্তত তিনগুণ বেশি। কোনও কোনও সবজির দাম এসব দামি ফলের চেয়েও বেশি। বাজারে আপেল ও কমলার কেজি ১২০ টাকা। অথচ এক কেজি শিম কিনতে লাগছে ১৩০ টাকা। শুধু শিম নয়, পাকা টমেটোর কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। শালগম, বরবটি ও গাজর ১০০ টাকা, বেগুন ও করলা ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আসা নতুন আলুর কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। নগরীর বাজারগুলো ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

নগরীর বন্দরবাজারে সবজি বিক্রেতা রবিন শিম, শালগম ও নতুন আলু বিক্রি করছেন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। জল্লারপাড়ের বাসিন্দা রাশেদ। চাকরি করেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে। তিনি জানান, ১০০ টাকা কেজিতে সবজি কেনার মতো সামর্থ্য তার নেই। ফলে তিনি সবজি কেনা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছেন। তার দাবি, সবজির দামের চেয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম কম। যে কারণে তিনি বেশি করে মুরগি কেনেন।

ব্রহ্মময়ী বাজারে গিয়ে দেখাযায়, শীতের আগাম সবজিতে ভরপুর। কিন্তু দাম চড়া। কিনতে গিয়ে স্বস্তি পাচ্ছেন না ক্রেতারা। সবজির সঙ্গে পেঁয়াজ ও আলু কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে ভোক্তাদের। গতকাল শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে কোনও সবজির দাম কমেনি। আগের সপ্তাহের দামেই সব ধরণের সবজি বিক্রি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ সবজির দামই প্রতি কেজি একশ’ টাকার ঘরে।

ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। ঝিঙে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে কচুর লতি। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক হালি কাঁচা কলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।

কাঁচা মরিচের দাম কমলেও স্বস্তি মিলছে না। ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, শীতের অন্যতম প্রধান সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপির দামেও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট একটি ফুলকপি কিনতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা গুনতে হচ্ছে। একই দাম গুনতে হচ্ছে বাঁধাকপিরও।
সবজি ব্যবসায়ী আখলাক জানান, বন্যা ও বৃষ্টির কারণে দুই থেকে তিনবার খেতের সবজি নষ্ট হয়ে হওয়ার প্রভাবে সবজির দাম এখন খানিকটা বাড়তি। তিনি বলেন, ‘কৃষক আগের ক্ষতি পোষাতে দাম বেশি রাখছে। যার ফলে ভোক্তাদেরও বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে।’

দাম বাড়ার বিষয়ে তিনি জানান, আড়তেই সবজির দাম বেশি। যে কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। এই এলাকায় বিভিন্ন ধরণের শাক বিক্রি করেন জলিল মিয়া। তিনি বলেন, ‘এখন পালংশাক ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। এই শাক গত বছর ২০ টাকায় পাওয়া যেত। এভাবে লালশাক, কলমি শাক, মুলাশাক কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি। গত বছরও যেসব শাক ১০ টাকায় বিক্রি করেছি, এ বছর সেগুলো ২৫ টাকার কমে বিক্রি করা যাচ্ছে না।’

এদিকে নতুন করে বেড়েছে মোটা ও সরু চাল এবং ভোজ্যতেলের দাম। মসুর ডালের দামও গত সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছিল। নতুন করে আর হেরফের হয়নি। এই সপ্তাহে নতুন করে দাম বেড়েছে আটা ও ময়দার। এছাড়া ধনে, তেজপাতা, দারুচিনি, শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে। বাজারে পুরানো আলুর কেজি আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

অবশ্য স্বস্তির বিষয়, আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কমেছে। কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা ডজন।
বাজারে এখন চার ধরনের পেঁয়াজ দেখা যায়। সবচেয়ে দাম কম চীনা ও তুরস্কের পেঁয়াজের, ৪০ টাকা কেজি। পাকিস্তানি পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকা। দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। চীনা রসুন কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। দেশি রসুন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। কমার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে আদা। কিছু দিন আগেও যে আদা আড়াইশ’ টাকা কেজি ছিল, এখন সেই আদার কেজি মাত্র ৮০ টাকা। বাজারে ছোট দানার মসুর ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ও মোটা দানার মসুর ডাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে তুলনামূলকভাবে মাছের দামও কম। খাল, বিল ও নদীনালায় পানি কমতে শুরু করায় দেশি বিভিন্ন ধরনের মাছ ধরা পড়ছে, যা বাজারে আসছে।

এব্যপারে সিলেটের বাজার কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ মোরশেদ কাদের বলেন, সবজির দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দাম নাগালের মধ্যে আসতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে। তবে আলুর দাম বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...