নতুন পথে চলতে চায় জাপা!

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২০, ৩:০৪ অপরাহ্ণ

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে খুব একটা বদলায়নি জাতীয় পার্টি। এরশাদের মৃত্যুর পর দলের কর্তৃত্ব নিয়ে যে দ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়েছিল, তা অনেকটা থেমেছে। এখন দল গুছানোর পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে নতুন চিন্তা করছে দলটি। পাশাপাশি নতুন বছরে নতুন পথে চলতে চান জাপার নেতারা। দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয় পার্টি যে জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল, সেটি মাথায় রেখেই মাঠে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চান দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের। কিন্তু নানা বাধায় তা হয়ে উঠছে না। তবে দলকে নতুন করে গুছিয়ে সামনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এরশাদের অবর্তমানে এখন দৃষ্টি সারা দেশে নতুন করে দল গোছানোর দিকে। পাশাপাশি বক্তৃতা-বিবৃতিতে চারপাশের বাস্তবতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও এতে সরকারি মহলে কী প্রতিক্রিয়া হয়, সে ব্যাপারেও তাদের সতর্ক থাকতে হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। আরো শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী হবে বা না হবে সবকিছু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে জাতীয় পার্টি কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সংসদের প্রধান বিরোধী দল। বিরোধী দল হিসেবে আমাদের যেটা কাজ, সেটা তো করতে হবে।’ জোট গঠনের বিষয় তিনি বলেন, এখনো এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জাপার মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘আমরা উপলব্ধি করছি, একটা রাজনৈতিক দলকে জনগণের পক্ষে কথা বলতেই হবে এবং এর মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। না হলে আমরা কাকে নিয়ে রাজনীতি করব!’

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জাপার নেতারা এখন দল গুছানো নিয়ে ব্যস্ত। দলের আটজন অতিরিক্ত মহাসচিবের নেতৃত্বে আটটি সাংগঠনিক দল গঠন করে সফর শুরু করা হয়েছে। জাপার সাংগঠনিক জেলা ৭৭টি। এগুলোর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আছে ৪৬টিতে। বাকিগুলোতে আহ্বায়ক কমিটি। যেসব জেলায় কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে সেখানে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হচ্ছে।

সূত্র মতে, জাপার নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, ২০২৩ সালে জাতীয় সংসদের যে নির্বাচন হবে সেটি আর ২০১৪ বা ২০১৮ সালের আদলে হবে না। তাই এখন থেকেই দলের সব পরিকল্পনা করা হবে রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আগামী সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক। এ ছাড়া জাপা এখন জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এ অবস্থান ধরে রাখতে কৌশলী ভূমিকা থাকার পাশাপাশি যেকোনো পরিবর্তনে দলকে সম্পৃক্ত রাখার বিষয়েও নীতিনির্ধারকরা সতর্ক আছেন।

এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৩০০ ‘যোগ্য প্রার্থী’র সন্ধান শুরু করেছে জাপা। শুধু তাই নয়, নিজেদের নেতৃত্বে নতুন একটি নির্বাচনী জোট গড়ার চিন্তাও আছে দলের নেতাদের। দলীয় সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল জাপার সঙ্গে জোট গঠন করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে এসব দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আগামী ১ জানুয়ারি জাপার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে চান দলটির নেতারা।

নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা য়ায়, রাজনীতিতে বিরোধী দল হিসেবে পরিচয় ধরে রাখার ক্ষেত্রে জাপার সামনে বড় বাধা বিএনপি। সে কারণে সরকারি দলের মিত্র হয়েও বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘সত্যিকারের’ বিরোধী দলের ভূমিকা প্রদর্শন করতে হয়। পাশাপাশি বিএনপির বিরুদ্ধেও বলতে হয়। জি এম কাদের সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিএনপির বিরুদ্ধে দিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, বিএনপির আপসহীন নেত্রী আপস করেই জেল থেকে বের হয়েছেন। তাদের আরেক নেতার (তারেক রহমান) প্রতি বিএনপির নেতাকর্মীদেরই আস্থা নেই। গত মাসে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ জানিয়েও বিবৃতি দেন। তিনি বলেছেন, দেশে আইনের শাসন নেই। সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বিষয়ে জাপা নেতৃত্বের অভিমত হচ্ছে, রাস্তাঘাট, সেতু বা বড় অট্টালিকা নির্মাণ অবশ্যই উন্নয়ন। কিন্তু প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন। এখনো মানুষ দারিদ্র্য, বৈষম্য, দলবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পায়নি।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...