পাটলাই নদীতে আটকে আছে তিন শতাধিক নৌযান

সিলেট অফিস,

  • প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৭:২৬ অপরাহ্ণ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীতে নাব্য সংকটের কারণে তীব্র নৌজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ১৫ দিন ধরে তিন শতাধিক নৌযান আটকে পড়েছে। নৌ চালক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ব্যবসায়ী ও নৌযানের চালকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখেও পড়েছেন।

পানি কমে যাওয়ায় পাটলাই নদীর সুলেমানপুর বাজার থেকে পাটাবুকা গ্রাম হয়ে কানামইয়া বিল পর্যন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিবছর দেখা দেয় তীব্র নৌজট। এতে কখনো কখনো ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লেগে যায় ১৫ থেকে ৩০ দিনের বেশি। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। গেল ১৫ দিন ধরে পাটলাই নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র নৌজট। তবে নৌযানগুলো কবে নাগাদ সৃষ্ট এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।

জানা গেছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্তবর্তী বড়ছড়া, বাগলী ও চাড়াগাঁও শুল্কস্টেশন থেকে কোটি কোটি টাকার কয়লা, চুনাপাথর, বালু ও নুড়িপাথর সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, দাউদকান্দি, ভৈরব, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বাগানবাড়ি, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ সারা দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় কয়লার মোকাম ও সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে চুনাপাথর জোগান দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এ ছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী নেত্রকোনা, কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়া করা হয়। এসব পণ্য পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু নদীর নাব্য সংকটের কারণে মাঘ মাসের প্রথম থেকেই পাটলাই নদীতে আটকা পড়ে শত শত মালবাহী নৌযান। এতে সৃষ্টি হয় তীব্র নৌজট। কোটি কোটি টাকার কয়লা ও চুনাপাথরবোঝাই নৌকাগুলো সুলেমানপুর পাটলাই নদীতে নৌজটে আটকা পড়ে থাকে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে।

সরেজমিনে পাটলাই নদীতে গিয়ে মাঝি ও কয়লা-চুনাপাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মাঘ মাসের প্রথম থেকে চৈত্র মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে প্রতিবছর এই নৌজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।

কারণ হিসেবে তারা জানান, প্রতিবছর হেমন্তে পানি শুকিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যায়। এতে দুই থেকে আড়াই মাস নদীতে নৌজট লেগেই থাকে।

কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার মাঝি শফিক মিয়া বলেন, আধাঘণ্টার পথ এখন পাড়ি দিতে কত দিন লাগবে, তা বলা যায় না। বাল্কহেড দিয়ে পণ্য পরিবহন করে যেখানে তাদের লাভ হওয়ার কথা, সেখানে লোকসান হচ্ছে। জ্বালানি, নৌশ্রমিকদের মজুরি, ঘাটে বসে খাওয়াদাওয়া ও পকেট খরচ বাবদ প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেখা গেছে, আটকে পড়া বাল্কহেডের ওজন কমানোর জন্য মালামাল নামিয়ে ছোট ছোট ভাড়া নৌকায় ওঠানো হয়। পরে কয়েক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকা থেকে ওই বাল্কহেডে আবার মালামাল ভরে দেওয়া হয়।

সরাইল উপজেলার আল্লার দান নৌকার মাঝি আলম মিয়া বলেন, নৌজটের কারণে তারা ভয়ে রাত যাপন করেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় সুলেমানপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন নৌযান নিয়ে আটকেপড়া মালিক ও মাঝিরা।

চুনাপাথর ও কয়লা ব্যবসায়ী আবুল খায়ের বলেন, নাব্য সংকটের কারণে ৩০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে কত দিন লাগবে, তা বলা যায় না। ক্রেতাদের সময়মতো মালামাল দিতে না পারায় এ সময় প্রতিবছর আমাদের ব্যবসার ক্ষতি হয়। প্রতিবছর নৌজটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান পণ্যবাহী বাল্কহেড চালক কায়েস মিয়া। তিনি বলেন, সরকার যদি নদীটি দ্রুত খনন করে দিত, তাহলে হয়তো আমাদের এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি মিলত।

তাহিরপুর থানার ওসি সৈয়দ ইফতেখার হোসেন বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে এসেছি। আটকে পড়া নৌযানের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। আশা করছি, নদীতে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না।

পাটলাই নদীর নৌজট পরিদর্শনে এসে গত মঙ্গলবার বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বলেন, পাটলাই নদীর নাব্য সংকট নিরসনে খুব দ্রুত লং বুম এক্সক্যাভেটর দিয়ে খনন করে নৌজটের সমস্যা সমাধান করা হবে। এ ছাড়া হাওর এলাকার নদনদীর পানিপ্রবাহ সচল রাখতে ও আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ফসল রক্ষা করতে বিআইডব্লিউটিএ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সমন্বয় করে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় নদী খননের কাজ করবে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...