১২ জুলাই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি : সিলেটে ফখরুল

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২৩, ৯:০২ অপরাহ্ণ

বুধবার (১২ জুলাই) ঢাকার সমাবেশে ‌‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের’ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য, নিজেদের স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য। যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু আজকে ভিন্নভাবে শেখ হাসিনা বাকশাল কায়েম করেছেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, (আওয়ামী লীগ) বেআইনিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নির্বাচনকে ব্যবহার করে। আর তারাই বলে দেশে নাকি সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। তারা মনে করে দেশটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তি, তাদের তালুকদারি। দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করেছে।

তিনি বলেন, ‘আগামী ১২ জুলাই ঢাকার সমাবেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা আসবে। যার মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে জাগ্রত করে এই সরকারকে বিদায় দিয়ে জনগণের নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আসুন আমরা সবাই উঠে দাঁড়াই।’

সিলেট শহরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে রোববার (৯ জুলাই) বিকেলে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘জনগণরে দাবি আদায়ে আমাদের কথা বলার অধিকার ১৪ বছর ধরে বাধা দিয়ে আসছে সরকার। আমরা এক কঠিন সময় ও সংকটের মধ্যে উপনীত হয়েছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্ব থাকবে কি না তা কয়েক মাসের মধ্যেই নির্ধারণ হবে।’

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার ও শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোসহ বিভিন্ন দাবিতে এ সমাবেশ হয়। বিকেল সোয়া ৪টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে নতুন ভোটার ও তরুণদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব।

সমাবেশ উপলক্ষে সকাল থেকেই সিলেট শহরে জড়ো হন দলটির নেতাকর্মীরা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সিলেট শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে দুপুরের মধ্যেই আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে জড়ো হন। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। সমাবেশ স্থলের চারপাশে অসংখ্য ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুন টাঙানো হয়।

যুবদল ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন, যুবদলের জাকির হোসেন সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবক দলের ফখরুল ইসলাম রবিন, ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, সিলেট জেলা বিএনপি সভাপতি মোহাম্মদ কাইয়ুম চৌধুরী, বিএনপির নিখোঁজ নেতা ও সিলেট বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, নতুন ভোটার সাবিয়া জামান আরিফা, সাদিয়া কাওসার রুহি, বিগত আন্দোলনে পঙ্গুত্ববরণকারী খালেদুর রহমান খালেদ, ‘গুম হওয়া’ ইফতেকার আহমেদ দিনারের বোন তাহসিন শারমিন তামান্না, কবিতা আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থী সায়েমা আহমেদ অসীম, মৌলভীবাজার জেলা ছাত্রদলের এম এ চৌধুরী শাহান, শিক্ষার্থী আরিফ উল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করবে। কিন্তু কোন সংবিধান? যেটা তারা নিজেদের মতো কাটা-ছেঁড়া করেছে সেই সংবিধান? আমরা বলেছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। যেটা ১৯৯৬ সালে নির্ধারণ হয়েছিল। আজকে কেউ ভোট দিতে পারেনি। তরুণরা ভোট দিতে পারেনি। এই কথা বলতে গিয়ে অনেককে মেরে পঙ্গু করা হয়েছে। আমাদের সিলেটের নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে এ সরকার বাংলাদেশ ও জনগণের অনেক ক্ষতি করেছে। এরা বিদ্যুৎ খাতকে লুটেরা মডেল বানিয়েছে। যা সম্প্রতি সরকারের রিপোর্টে বলা হয়েছে। অথচ সরকার বলে বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। দশ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতুর ব্যয় এখন কত? আর দেশের কৃষক তার ফসলের দাম পায় না। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে না। এককথায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রায় সব খাতে দলীয়করণ করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, গত দুটি নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। সেজন্যই আমরা আবারও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি তুলে ধরেছি। যদিও আওয়ামী লীগ নিজেরা এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল। আজকে এই সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু দেয়নি। চার কোটি যুবক এখন বেকার। এমতাবস্থায় তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ বাঁচাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য সরকারকে বিদায় করা ছাড়া কোনো পথ নেই। সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। তা না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে।

তিনি আরও বলেন, তারুণ্যের সমাবেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে তরুণরা এগিয়ে আসছেন।

এ সময় সিলেটের উন্নয়নে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর নাম গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন বিএনপির মহাসচিব।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...