ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল সেপ্টেম্বরে

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২৩, ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

দেশের সর্ব দক্ষিণের জেলা কক্সবাজার। বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকতসহ পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সড়ক, নৌ, বিমানপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকলেও এত দিন রেলপথে কোনো যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল না। তবে বর্তমান সরকার পর্যটন নগরীকে রেলওয়ে যোগাযোগের আওতায় নিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সালে প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেল যোগাযোগ চালু হবে। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরেই চালু হবে ঢাকা-কক্সবাজার রেল চলাচল। আর এর মাধ্যমেই খুলতে যাচ্ছে রেলের দক্ষিণের দুয়ার।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পথে রেলস্টেশন থাকছে ৯টি। পুরো প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩৯১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় নির্মিত হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন। সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক স্থাপন ও স্টেশনের কাজ এরই মধ্যে ৮৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

জানা গেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেনের প্রথম ট্রায়াল হতে পারে। সড়কপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে যেখানে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ১১ ঘণ্টা, ট্রেনে আসতে সেখানে লাগবে মাত্র সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। কমে আসবে পরিবহন ব্যয়ও। ঢাকা থেকে এসি বাসে যেখানে দুই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে ট্রেনের এসি চেয়ারে বসে কক্সবাজার আসতে লাগবে মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। নন-এসি চেয়ার কোচে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া ট্রেন চলবে এই রুটে। পরে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব ট্রেন এখন চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব ট্রেনের শেষ গন্তব্য হবে কক্সবাজার। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রেন চালু হবে এই রুটে। তবে এখনো ট্রেনের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।

ঝিলংজা স্টেশন এলাকার বাসিন্দা মো. রুবেল মিয়া বলেন, বাড়ির কাছেই আসবে চট্টগ্রাম বা ঢাকা যাওয়ার ট্রেন। ফলে সকালে বা রাতে যেকোনো সময় টিকিট কেটেই কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া চট্টগ্রাম বা ঢাকায় চলে যেতে পারব।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মাজহার আলী বলেন, সরকারের খুব ভালো একটি কাজ এটা। খুব সুন্দর করে রেলস্টেশন করছে সরকার। এখন সহজেই মানুষ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখতে আসতে পারবে। রেলপথ পেয়ে আমরাও খুশি।

স্থানীয় গ্যালাক্সি হোটেলের মালিক মো. মনির হোসেন বলেন, ট্রেন চলাচল শুরু হলে পর্যটকরা সহজেই কক্সবাজারে আসতে পারবে। এতে পর্যটক আরো বাড়তে পারে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজে ও পণ্য পরিবহনে আগের তুলনায় অনেকটাই সহজ হবে রেলপথ চালু হলে।

কক্সবাজারে ঘুরতে আসা ফয়সাল আহমেদ বলেন, ঢাকা থেকে বাসে এসেছি। ১৪ ঘণ্টা লেগেছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আসতে। অনেক কষ্ট হয়েছে। বিমানে আসলে হয়তো ভোগান্তি এড়িয়ে আসা যেত, কিন্তু ব্যয় বেশি হতো। তবে ট্রেন চলাচল শুরু হলে অনেক সহজে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার আসতে পারবেন পর্যটকরা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, কক্সবাজার-ঢাকা রুটে রেলপথ চালু হলে এটি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে। এর মাধ্যমে সহজেই স্থানীয়রা কক্সবাজার থেকে সরাসরি ঢাকায় যেতে পারবেন।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এ প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু বাকি আছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল ট্রেন চলবে। তবে সেপ্টেম্বরে ট্রায়াল ট্রেন চললেও বাণিজ্যিকভাবে যেতে আরো দুই-তিন মাস লাগবে। চলতি বছরের শেষ দিকে এই রেলপথে আমরা ট্রেন চালুর চেষ্টা করব।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে রেলপথ চালু হলে এর মাধ্যমে এশিয়ান কানেক্টিভিটিতে যুক্ত হতে পারবে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করেই বর্তমান সরকার এখানে নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা প্রকাশ পায়।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...