পানিবন্দি চট্টগ্রাম নগরী : তলিয়ে গেছে জেলার নিম্নাঞ্চল

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২৩, ২:২৬ অপরাহ্ণ

টানা বর্ষণে চারদিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে চট্টগ্রাম নগরী। নগরের পাশাপাশি জেলায় নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামও পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলের ক্ষেত ও পুকুর। বিভিন্ন উপজেলায় পাহাড়ধসের শঙ্কায় বাসিন্দাদের সরে যেতে মাইকিং করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জেলা প্রশাসনের কমকর্তারা।

সোমবার (৭ আগস্ট) নগরের খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজার, ফিরিঙ্গিবাজার, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, চকবাজার, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জামালখান, দেওয়ান বাজার, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, তিন পুলের মাথা, বড়পোল, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে আছে।

জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে নগরে চলমান আছে সিডিএ’র মেগা প্রকল্পের কাজ। ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সমপ্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক মেগা প্রকল্পটি ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট একনেকে অনুমোদন পেয়েছিল। ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সিডিএর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। একই বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ৭৬ শতাংশ ভৌত কাজ শেষ হয়েছে। এরপরও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী।

খতিবের হাট এলাকার বাসিন্দা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, নিচতলার বাসিন্দা হওয়া মানেই যেন বৃষ্টির সাথে বসবাস করা। ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এতো বড়ো মেগা প্রকল্পের কাজ হওয়ার পরও আমরা ঘরে থাকতে পারছি না। দুই বছর আগে যেমন পানি উঠতো, এখনো একইভাবে পানি উঠছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। এই দুর্ভোগ নিয়েই আমাদের চলতে হচ্ছে, কেউ আমাদের দুর্ভোগ চোখে দেখে না। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় উঠছে পানি, দীর্ঘ হচ্ছে পানি জমে থাকার সময়ও। সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ বাড়ছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের।

চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, ‘সিডিএ তাদের প্রকল্পের আওতাধীন খাল থেকে যে পরিমাণ মাটি ( ৯.৫ লক্ষ কিউবিক মিটার) উত্তোলনের কথা তার চার ভাগের এক ভাগ মাটিও তুলে নাই। খালের প্রশস্থতাও কমিয়েছে রাস্তা করার জন্য, অন্যদিকে খালের গভীরতাও কমেছে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাটি উত্তোলন না করার কারণে। ফলে পানির স্পেস কমে গেছে। আরেকটা কারণ হলো স্লুইচগেট সমূহ এক্টিভ করা হয়নি এবং পানি পাম্প আউট করার জন্যও কোনো ব্যবস্থা এ পর্যন্ত করে নাই। ফলে পানি স্লো নামছে। এটাই মূলত জলাবদ্ধতার কারণ।’

এদিকে টানা বর্ষণে সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, হাটহাজারী, সাতকানিয়া এবং রাউজান উপজেলার নিচু এলাকায় লোকালয়ে পানি উঠে গেছে। এতে কয়েক’শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এসব উপজেলার পাশাপাশি বোয়ালখালী ও রাঙ্গুনিয়ায় ফসলের ক্ষেত ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে বীজতলা ও নতুন রোপণ করা ধানের চারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মাছও পুকুর ছেড়ে গেছে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল জানান, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে অতি ভারি বৃষ্টিপাত আজ সোমবারও অব্যাহত থাকবে। ৯ আগস্ট থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে পারে। সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত এবং নদীবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...