গাজা পরিস্থিতি নিয়ে কাঁদলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৭ অপরাহ্ণ

যুদ্ধে বিধ্বস্ত গাজার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস। মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গাজার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি বৈঠকে তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান।

মঙ্গলবারের (৩১ জানুয়ারি) বৈঠকে ডব্লিউএইচও প্রধান বলেন, ‘আমার নিজের অভিজ্ঞতার কারণে আমি বিশ্বাস করি যে যুদ্ধ কোনো সমাধান আনে না। যুদ্ধ আরও, আরও ঘৃণা, আরও যন্ত্রণা, আরও ধ্বংস ডেকে আনে। তাই আসুন শান্তি বেছে নেয়া যাক এবং রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যাটির সমাধান করি।’

প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেব্রেয়াসুসও যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেছেন। ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়ার মধ্যে ১৯৯৮-২০০০ সাল পর্যন্ত চলা যুদ্ধের সময় বাঙ্কারে সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

গাজার পরিস্থিতিকে নারকীয় উল্লেখ করে গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘আমি মনে করি আপনারা সবাই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের কথা বলেছেন। আশা করি সত্যিকারের সমাধানের মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান হবে।’

এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণসহায়তা তহবিলে অর্থ দেয়া বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ। এই অবস্থায় অঞ্চলটিতে তীব্র খাদ্যসংকটের কারণে প্রচণ্ড ক্ষুধার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান একে নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

গাজায় বর্তমানে প্রচণ্ড ক্ষুধার পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানম গেব্রেয়াসুস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘চেক পয়েন্টের আশপাশে অহেতুক দেরি করার কারণে মানুষের মধ্যে খাবার পৌঁছে দিতে দেরি হচ্ছে। এটি গাজার মানুষের চরম হতাশার কথা তুলে ধরে, যারা প্রচণ্ড ক্ষুধাসহ নারকীয় পরিস্থিতিতে বাস করছে।’

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা গাজা প্রশাসনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, গাজায় গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু ইসরায়েলি বিমান ও স্থল হামলায় নিহতের সংখ্যা এখনো ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে অঞ্চলটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৭৫১।

একই সময়ে, ইসরায়েলি হামলায় গুরুতর আহত হয়েছে আরও অন্তত ৬৫ হাজার ৬৩৬ জন। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহত হয়েছিল ১ হাজার ১৩৯ জন। এই সময়ে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি প্রায় ২৪০ জন ইসরায়েলি ও বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জিম্মি করে আনে।

অন্যদিকে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছে যুক্তরাজ্য। সেই সময়কে এগিয়ে আনতে দেশটি কাজ করতেও প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ব্রিটেনের মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ক্যামেরন এ ঘোষণা দেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতমুখর পরিস্থিতি, ফিলিস্তিনিদের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবির ন্যায্যতা, নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ইসরায়েলের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায়ে জাতিসংঘেও ভূমিকা রাখবে ব্রিটেন ও তার মিত্ররা।

ডেভিড ক্যামেরন বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেব এবং এ ইস্যুকে আরও গতিশীল করতে জাতিসংঘেও কাজ করব। আমাদের মিত্ররা এ ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে বলে আশা করছি। কারণ, যদি জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে গত কয়েক দশকের অপেক্ষা শেষ হওয়ার পথ সুগম হবে।’

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...