লন্ডনের বাংলাদেশ সেন্টার, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রথম হাই কমিশন, বর্তমানে নেতৃত্বের কোন্দলে জর্জরিত। এই ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটি একসময় সভা-সমাবেশ, বিভিন্ন সেবা প্রদান, নামাজের ব্যবস্থা এবং ছাত্র হোস্টেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে সম্প্রতি সংস্কার কাজ শেষে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেলেও সেন্টারটি এখন নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের কারণে সেবা প্রদান থেকে বঞ্চিত।

বিগত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপ সেন্টারের নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদেরকে বৈধ দাবি করছে। চ্যারিটি কমিশন উভয় গ্রুপকেই অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। এই বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে, এবং গত কয়েক মাসে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। পদাধিকার বলে হাইকমিশনার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি এই বিরোধ মীমাংসা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কমিউনিটির মুরুব্বিরাও সালিশের চেষ্টা করেও কোনো সমাধানে পৌঁছাতে পারেননি। কমিটির মেয়াদও ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে।

গতকাল গ্রিন প্যানেলের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্টারটিকে রক্ষা করার জন্য সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন এ কে এম শহীদুর রহমান। তিনি বলেন, “এই সংকট নিরসনের জন্য এ পর্যন্ত গৃহীত সকল উদ্যোগই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তাই এই অচলাবস্থা সৃষ্টিকারীদের অপকৌশল বন্ধ করতে হবে। সেন্টারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির নিরাপত্তা বিধান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। তারা ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কমিউনিটির স্বার্থ ও সেবা গ্রহণকারীদের স্বার্থকে সবার উপরে স্থান দেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়াও, বৃটেনে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও পদাধিকার বলে বাংলাদেশ সেন্টারের চেয়ারপার্সন আবিদা ইসলামকে এই সংকট সমাধানে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।

সংকট সমাধানের উপায় হিসেবে দুটি প্রস্তাব করা হয়:
১. সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ৪২ ধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রদান এবং ৪৪ ও ৪৫ ধারা অনুযায়ী কমিটি ও উপ-কমিটি গঠন।
২. এজিএম ডেকে নির্বাচিত কমিটির হাতে সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ।

সংবাদ সম্মেলনে সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মহিবুর রহমান মুহিব সভাপতিত্ব করেন। সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শহীদুর রহমান, সহ-সভাপতি ইছবাহ উদ্দিন, হাবিবুর রহমান ময়না, চিফ-ট্রেজারার মোহাম্মদ ফাইজুল হক, যুগ্ম-সম্পাদক শামীম আহমেদ ও যুগ্ম-ট্রেজারার নসিম আহমেদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডনের এই সংকট নিরসনে সকল পক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।

 Print This Post