সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া হাতে পাবে। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া তৈরি করা হয়েছিল।
কমিশন ৩০টি দলের কাছে মতামত চাইলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৬টি দল তা জমা দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও ইসলামী ঐক্যজোট এখনো মতামত দেয়নি। ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, “তারা হয়ত দুয়েক দিনের মধ্যে মতামত জমা দিয়ে দেবেন।”
বাম গণতান্ত্রিক জোটের চার দল সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন প্রসঙ্গে আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলছে, সংসদ ছাড়া সংবিধান সংস্কারের কোনো সুযোগ রাখা হলে সনদে সই করার সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাসদ বলেছে, জুলাই জাতীয় সনদকে সংবিধানের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া যাবে না। দলটির মতে, সনদ নিয়ে যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয়, তাকে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
বাংলাদেশ জাসদ আরও জানিয়েছে, সংবিধানের সংশোধনীগুলো নির্বাচিত জাতীয় সংসদ ও উচ্চকক্ষে (যদি নির্বাচিত হয়ে) গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে দলটি আলাদা বিবৃতিও দিয়েছে।
সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদেরকে অনানুষ্ঠানিকভাবে আজকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। যেহেতু আমরা এর আগে একটি আলোচনা বয়কট করেছি সেই কারণে আজকে এলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম, একটা হচ্ছে সনদ, আরেকটা হচ্ছে সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আজকে আমাদের মতামত নিয়েছে। এগুলো নিয়ে উনারা কাজ করে দুই চার দিনের মধ্যে চূড়ান্ত মত দেবেন। দিয়ে আমাদের কাছে জানতে চাইবেন এটার সঙ্গে আমরা থাকতে পারব কি না। আর আমরা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দিয়ে দেব।”
তিনি আরও বলেন, “সনদ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লিখিত মত তারা জানতে চান, কীভাবে বাস্তবায়ন করবে তা অন্যদের সাথে আলোচনা কর আমরা একটা মত দেব। উনাদের সাথে আমাদের দ্বন্দ্ব ঐকমত্য নিয়ে, কারণ যে সব বিষয়ে সবাই একমত সেগুলোকে ঐকমত্য বলতে পারবেন, অন্যগুলিকে ঐকমত্য বলা উচিত না। কিন্তু আপনারা অন্যগুলোকে ঐকমত্য বলে জটিলতা সৃষ্টি করছেন। এরকম থাকলে আমরা আগেও বলেছি, লিখিত দিয়েছি হয়ত এই ঐকমত্যের পক্ষে থাকা সম্ভব হবে না।”
প্রিন্স বলেন, “এখানে থাকা বা স্বাক্ষর করা সম্ভব কি না তা আপনাদের চূড়ান্ত দেখার পর জানিয়ে দেব। বাস্তবায়নের কথা আমরা লিখিত দিয়েছি, যে ব্যাপারে ১০০ ভাগ ঐকমত্য হয়েছে সেটা যদি আইনি প্রক্রিয়ায় করা সম্ভব হয় করবেন। আর যেটা সংবিধান সংশোধনীর বিষয়, সেটা ছেড়ে দিতে হবে আগামী সংসদের উপরে। যারা সংবিধানে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে করবে।”
বৈঠক শেষে বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ গণমাধ্যমকে বলেন, “আজকে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে আমাদের ডেকেছে, আমরা আগেও বলেছি আজকেও বলেছি, বর্তমান বাংলাদেশ সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দিলে এটা আমরা কোনভাবেই মেনে নেব না।”
ঐকমত্য কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা পবন চৌধুরী জানান, বৈঠকে ১৮টি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যেখানে ১৭টি দল অংশ নেয়। তবে তিনি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের কোনো বিষয় নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কবে নাগাদ দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়া হবে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ গণমাধ্যমকে বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমরা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছি। আমরা আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সনদের চূড়ান্ত কপি স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে দিয়ে দেব। আশা করি সবাই স্বাক্ষর করবেন।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ৩২টি দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠকে মোট ৬২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়। পরে দ্বিতীয় দফার আলোচনায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ২০টি বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এরপর ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে দলগুলোর কাছে খসড়া পাঠানো হয়।
আগে পাঠানো পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় আটটি প্রতিশ্রুতির কথা বলা ছিল— ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি, শহীদদের মর্যাদা, বিচার ও ক্ষতিপূরণ, সংবিধান সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন এবং অবিলম্বে বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশ কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি।
চূড়ান্ত খসড়ায় দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে সংশোধন আনা হলেও তা এখনো প্রকাশ করেনি ঐকমত্য কমিশন।